মোহাম্মদপুরে আধিপত্য বিস্তারের জেরে বিভিন্ন সময়ে অন্তত সাতজনের কবজি কেটে টিকটক ভিডিও তৈরি, কাটা কবজি নিয়ে উল্লাস করে আলোচনায় আসা মো. আনোয়ারকে (৩৬) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। সোমবার ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আদাবর থেকে তার দুই সহযোগী মো. ইমন (২০) ও মো. ফরিদকেও (২৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আনোয়ারের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র কারবারের মামলা রয়েছে। র্যাব জানিয়েছে, অর্থ ও মাদকের প্রলোভনে কিশোরদের তার ‘গ্যাং’-এ নিয়ে অপরাধ করিয়েছে এবং পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-২-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খালিদুল হক হাওলাদার জানান, মোহাম্মদপুর, আদাবর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদক, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির রাজত্ব গড়ে তুলেছে কবজি কাটা গ্রুপ। এই রাজত্ব গড়তে গিয়ে আনোয়ার সাতজনের কবজি কাটাসহ বহু মানুষকে কুপিয়ে আহত ও পঙ্গু করেছে। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর আনোয়ার তিনজনের কবজি কাটার কথা স্বীকার করেছে। তবে র্যাবের তদন্তে তার বিরুদ্ধে সাতজনের কবজি কাটার তথ্য মিলেছে।
র্যাব জানিয়েছে, আনোয়ার গ্রুপের সদস্যরা কাউকে টার্গেট করলে কৌশলে তাকে আটকে করে। তার দলের সদস্যরা প্রথমে রাস্তায় যানজট তৈরি করে, সিসি ক্যামেরা থাকলে সেগুলো ভাঙচুর ও নজর রাখে, রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের আদলে যানজট নিয়ন্ত্রণের নাটক সাজিয়ে রাস্তা ব্লক করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সাধারণ জনগণ বাধা দিচ্ছে কি না, তা খেয়াল রাখে। এরপর তারা ফিল্মি স্টাইলে ভুক্তভোগীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে হাতের কবজি কেটে সবার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে যায়।
গত কয়েক মাসে আনোয়ারের হাতেই সাত থেকে আটজন হামলার শিকার হয়েছেন। কেউ হারিয়েছেন হাত, কেউ পা হারিয়ে পঙ্গু হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। তার হামলার শিকার ব্যক্তিদের বেশিরভাগই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। তার ভয়ে মামলাও করেন না অনেকে। আবার কেউ মামলা করলে তাকে নানা ভয়ভীতি দেখায় আনোয়ারের কবজিকাটা গ্রুপের সদস্যরা।
আনোয়ারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও নিজেদের তদন্তের বরাতে র্যাব জানিয়েছে, ২০০৫ সালে আনোয়ার জীবিকার সন্ধানে বাগেরহাট থেকে ঢাকায় তার বাবার কাছে চলে আসে। ঢাকায় এসে বিশুদ্ধ খাবার পানি পরিবহনের কাজ করত। সেই কাজ ছেড়ে দিয়ে জড়িয়ে পড়ে ছিনতাই, চাঁদাবাজিতে। তৈরি করে কিশোর গ্যাং। মোহাম্মদপুর, রায়েরবাজারসহ আশপাশের এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সহিংস হয়ে ওঠে আনোয়ার ও তার গ্রুপের সদস্যরা। মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, নবীনগর হাউজিং, চন্দ্রিমা হাউজিং ও আদাবরের শ্যামলী হাউজিং, শেখেরটেক, নবোদয় হাউজিং এলাকায় হত্যা, অস্ত্র-গুলি, মাদক কেনাবেচা, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পরে আনোয়ারের বাহিনী।
২০২৪ সালে মানুষের কবজি কেটে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেকে জানান দেয় আনোয়ার। পরে গ্রেপ্তার এড়াতে চলে যায় আত্মগোপনে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের তার গ্রুপের অন্যতম সদস্য ভাগনে বিল্লালসহ বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়। আত্মগোপনে থেকেই অপরাধ চালিয়ে যেতে থাকে আনোয়ার।
র্যাব জানিয়েছে, নিজের শক্তি বৃদ্ধি এবং আধিপত্য বজায় রাখার জন্য এলাকার কিশোরদের মাদক, অস্ত্র ও অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে নিজস্ব দলের ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে তাদের ব্যবহার করে আনোয়ার। এভাবে সে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়ে ওঠে।
আনোয়ারের মদদদাতাদের বিষয় জানতে চাইলে র্যাব-২ এর অধিনায়ক খালিদুল বলেন, ‘আনোয়ারের পেছনে দীর্ঘদিন লেগেছিলাম। আমাদের কাছে তথ্য আসে মোহাম্মদপুরের এক্সেল বাবু নামের এক ব্যক্তি তাকে মদদ দিচ্ছে।’ ৫ আগস্টের পর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযানে পাঁচ শতাধিক ছিনতাইকারী গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি খালিদুল বলেন, ‘মোহাম্মদপুরে অপরাধের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা হবে।’
Discussion about this post