দেশে ফেরার জন্য সমস্ত প্রস্তুতি সেরে রেখেছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী আলম রাশেদ। বিমানের টিকেট থেকে শুরু করে প্রিয়জনদের জন্য কেনাকাটা, এমনকি লাগেজ গোছানো পর্যন্ত সবই শেষ করেছিলেন। কিন্তু সেই বহুকাঙ্খিত ফেরা আর সম্ভব হলো না। মাত্র ৩১ বছর বয়সে ঘুমের মধ্যে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
রাশেদের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার জাহানপুর গ্রামে। বাবা শামসুল আলম। মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন তার মেজো ভাই মোহাম্মদ নাসির। তিনি জানান, আবুধাবির মদিনা জায়েদ এলাকায় রুমমেটদের সঙ্গে থাকা অবস্থায় ঘুমের মধ্যে মারা যান রাশেদ।
নাসির বলেন, “সকালে ঘুম থেকে না ওঠায় রুমমেটরা তাকে ডাকাডাকি করেন। সাড়া না পাওয়ায় তারা কাছে গিয়ে দেখেন রাশেদ নিথর হয়ে পড়ে আছেন।” স্থানীয় পুলিশ ও চিকিৎসকদের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়, তিনি আর বেঁচে নেই।
বন্ধু ও সহকর্মী তানভীর ফরহান জানান, রাশেদ সোমবার দেশে ফেরার পরিকল্পনা করেছিলেন। এমনকি বিমানের টিকেট, কেনাকাটা, সবকিছুই শেষ ছিল। কিন্তু কাজের প্রয়োজনে ছুটি এক মাস পেছানোর কথাও ভাবছিলেন তিনি।
রাশেদের এই অকাল প্রয়াণে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। দেশে তার স্ত্রী, বাবা-মা, তিন ভাই ও দুই বোন রয়েছেন।
৭ বছর ওমানে থাকার পর বছরখানেক আগে রাশেদ সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান এবং একটি ভ্যালেট পার্কিং কোম্পানিতে চাকরি নেন। তার স্বপ্ন ছিল পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর। কিন্তু সব পরিকল্পনা অপূর্ণ রেখে জীবনের শেষ অধ্যায়টি শেষ হলো প্রবাসে।
রাশেদের মৃতদেহ বর্তমানে আবুধাবির বানিয়াস এলাকার কেন্দ্রীয় হিমঘরে রাখা আছে। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাশ দ্রুত দেশে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
এই ঘটনা শুধু রাশেদের পরিবার নয়, পুরো প্রবাসী সমাজের জন্য এক বিরাট শোকের বিষয়। হাজারো স্বপ্ন নিয়ে যারা প্রবাসে পাড়ি জমায়, তাদের মধ্যে অনেকের ভাগ্য হয়তো রাশেদের মতোই নিষ্ঠুর পরিহাসে পরিণত হয়।
রাশেদের এই করুণ মৃত্যুর মাধ্যমে আবারও মনে করিয়ে দেয় প্রবাসীদের জীবনের অনিশ্চয়তা এবং তাদের প্রতি সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্বের প্রয়োজনীয়তা।
Discussion about this post