আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত গণজমায়েতে এসব কথা বলেন তিনি।
চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অভিমুখে হেফাজতে ইসলামের যাত্রা, সমাবেশ ও স্মারকলিপি দেওয়ার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি থাকলেও গতকাল এই কর্মসূচি পরিবর্তন করে এই গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর মিছিল নিয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা নগরের বিভিন্ন সড়ক পদক্ষিণ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালেয় যান। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারকে স্মারকলিপি প্রদান করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
এসময় অন্তর্বতী সরকারের উদ্দেশে হারুন ইজহার বলেন, ‘ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে না পারলে দাসত্ব থেকে মুক্তি মিলবে না। মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ভারতের দাসত্ব থেকে বেরিয়ে এসেছে। তবে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলছি না।
জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে জমায়েতে মুফতি হারুন ইজহার আরো বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী শক্তি শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশকে শুধু ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়নি, এর পেছনে মূল চালিকাশক্তি ছিল হিন্দুস্থানী আধিপত্যবাদ। তারা দেশের প্রত্যেকটা সেক্টরকে ধ্বংস করেছে। ফ্যাসিবাদী শক্তি এখনও ভারতে বসে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবিপ্লবের নেশায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করতে ‘ইসকন’ নামের সন্ত্রাসী সংগঠনকে তারা মাঠে নামিয়েছে।
এরপর কাজির দেউড়ি মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা হারুন ইজহার বলেন, ‘আজকে আমাদের সমাপ্তি নয়, আজকে থেকে আমাদের সূচনা। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে, এ দেশের জনগণ গর্জে উঠেছে। হয়ত ভারতকে থেমে যেতে হবে, অন্যথায় ভারতকে তার পরিণামের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আর কোনো স্বৈরাচারকে ভারত বাংলার জমিনে চাপিয়ে দিতে পারবে না। আর কোনো ইসকন নামের জঙ্গী সংগঠনকে ভারত বাংলার জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে পারবে না। ভারত আমাদেরকে আর দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’
চার দফা স্মারকলিপিতে যা আছে
স্মারকলিপিতে হেফাজতে ইসলাম বলেছে, ‘বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক সমাজ এবং তৌহিদি জনতার পক্ষ থেকে ভারতের প্রতি কোনো ধরনের হুমকি নেই। বাংলাদেশ, ভারতসহ সারা বিশ্বের সকল শান্তিকামী মানুষের জন্য একটি নিরাপদ দেশ। আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র দেশের স্বকীয়তা ও ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল জনগণের শান্তিপূর্ণ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা। অতএব, এই অপপ্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
এতে বলা হয়, ‘আমাদের দাবি মিডিয়ার মিথ্যাচার বন্ধে পদক্ষেপ; রাজনীতিবিদদের দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা; বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের সকল ধরণের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা; দুই দেশের সম্পর্কের মসৃণতা বজায় রাখা।
এসব দাবির শেষে বলা হয়, ‘আমরা ভারতকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ভারতের প্রতি কোনো শত্রুতা বা হুমকি নেই। বাংলাদেশ তার নিজস্ব সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সকল প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আশা করি, ভারত সরকার এ বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মিথ্যা তথ্য ও অপপ্রচার বন্ধ করার ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আমরা এমন কোনো অপ্রীতিকর বিষয় চাই না যা আমাদের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমরা বিশ্বাস করি, ভারতের মতো প্রগতিশীল রাষ্ট্র এই বিষয়ে তার নীতিগত অবস্থান বজায় রাখবে এবং সঠিক পদক্ষেপ নেবে।’
গণজমায়েতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরীর সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর ইদরীস ও মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, সহকারী মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ আজাদী, মাওলানা জাফর আহমদ ভাটুয়া প্রমুখ।
মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির বলেন, ‘আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।’
Discussion about this post