চট্টগ্রামের এক নারীর কাছ থেকে সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে ৪৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ‘ভাগ্নি’র বিরুদ্ধে। সাবেক মন্ত্রীর ভাগনি পরিচয় দেওয়া ওই নারী সরকারি চাকরি ছাড়াও চেয়ারম্যান ও মেয়র পদে মনোনয়ন নিয়ে দেওয়ার কথা বলেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গার মানুষের কাছ থেকে হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এছাড়া সেই ভাগনির স্বামীও সমানতালে প্রতারণা করেছেন মানুষের সঙ্গে। তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালানোর সময় গণধোলাই খান ওই ব্যক্তি।
এ ঘটনার পর এতদিন বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়েও টাকা ফেরত পাননি ভুক্তভোগী শারমিন আকতার।
শারমিন আকতার দাবি করেন, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাগনি পরিচয় দেওয়া শাকিলা লিপির সঙ্গে কাজের সুবাদে তার পরিচয়। তাকে এক পর্যায়ে ঢাকায় নিয়ে সংসদ ভবনে এবং ওবায়দুল কাদেরের বাসায় নিয়ে যান লিপি। ওইখানে তার পরিচিত কয়েকজনকে বিআরটিএ, বিভিন্ন ব্যাংক, বিটিভি ও শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকারি চাকরি দেওয়া কথা বলেন লিপি। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখালে তিনি সরল বিশ্বাসে ১৭ জনের কাছ থেকে চাকরির জন্য ৪৬ লাখ টাকা শাকিলা লিপির ব্যাংকে অ্যাকাউন্টে পাঠান।
শারমিন আকতার বলেন, ২০২০ সালে চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী শুরু হয় করোনা মহামারী। এরপর থেকে করোনার অজুহাতে দেখিয়ে ‘কাজ হতে’ কিছুদিন সময় লাগবে জানিয়ে নগর ছেড়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় পাড়ি জমান লিপি। তার স্বামী ফখরুল ছিলেন কর্ণফুলী উপজেলার মাছ ধরার ট্রলারের ক্যাপ্টেন। সেখানে তারা মামুন নামের এক ব্যক্তির ভাড়া বাসায় থাকতেন। কিনউ সেখানেও তারা প্রতারণা করেন।’
তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিকের পর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বারবার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন শাকিলা লিপি। এরপর এক পর্যায়ে ধানমণ্ডি আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করে তার ভাগনি লিপির এমন প্রতারণার বিষয়ে জানতে চান। কিন্তু সেখানে গিয়ে শুনতে পান আনিস নামের মাইজদীর এক ছেলের মাধ্যমে বিআরটিএসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সরকারি দেওয়ার নাম করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় লিপি। সেইসঙ্গে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলে অনেক চেয়ারম্যান প্রার্থী ও মেয়র প্রার্থীর কাছ থেকেও টাকা নিয়ে ধানমন্ডি থেকে পালিয়ে উত্তরায় চলে যায় লিপি।
যেসব চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে লিপিকে দেওয়া হয়েছে, তারা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন জানিয়ে শারমিন আকতার বলেন, ‘প্রত্যেকটা প্রার্থীর সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে। এজন্য লিপির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারিনি। এ সুযোগে কাজে লাগিয়ে শাকিলা লিপি তার ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ, ইমোসহ সব ধরনের কনটাক্টে আমাকে ব্লক করে দেয়। বন্ধ হয়ে যায় মুঠোফোনে কল রিসিভও।’
প্রতারণার কারণে শাকিলা লিপির স্বামীও গণধোলাইয়ের শিকার হন জানিয়ে শারমিন আকতার বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের পতন হওয়ার পরে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারি, শাকিলা লিপি ঢাকা আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বালি সাপ্লাই দেওয়ার জন্য এসএল এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলেছে। কিন্তু কাজ দেওয়ার কথা বলে প্রায়ই ২০-২২ জন সাপ্লায়ারদের প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করে গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে পালিয়ে যাওয়ার সময় গণধোলাই খায় লিপির স্বামী। পরে উত্তরার লুবানা হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করানো হয় তাকে। কিন্তু ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকায় পৌঁছে হাসপাতালে দেখতে পাইনি লিপির স্বামীকে। তিনি নাকি ওইদিন ভোরেই পালিয়ে যান হাসপাতাল থেকে।’
প্রশাসনের মাধ্যমে শাকিলা লিপির সন্ধানের আর্জি জানিয়ে শারমিন আকতার বলেন, আমি নিরুপায়। প্রশাসনের মাধ্যমে প্রতারক শাকিলা লিপির সন্ধান ও বিচার চাইছি। যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দিয়েছি, তাদের প্রেসার আমি আর নিতে পারছি না। বারবার লিপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও, সে একবার বলে অসুস্থ, একবার বলে তার স্বামী মারা গেছে। এসব বলে বলে সময় নষ্ট করতে থাকে। প্রতারক লিপি চাকরির কথা বলে আর্থিক ক্ষতিরসহ সরকারি চাকরি করার বয়স শেষ করে দিয়েছে অনেকের।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাকিল লিপির মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
Discussion about this post