তিনদফা চেষ্টা চালিয়ে খুলনার শিরোমনি এলাকায় প্রশিকা নামক বেসরকারি সংস্থার প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করেছে দুর্বৃত্তরা।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাদের সহযোগিতা নিয়ে এ দখল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে সংস্থাটির আরেকপক্ষ। দখলকারীরা প্রশিকার এক সময়কার কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে বেসরকারি সংস্থা প্রশিকা খুলনার শিরোমনি এলাকায় খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৫ একর ৬৭ শতক জমি কেনে। পরে পুরো জমি জুড়ে সেখানে প্রশিকা গলদা চিংড়ি হ্যাচারি নামে একটি প্রতিষ্ঠান করে গত দুই যুগ ধরে গলদা এবং সাদা মাছের পোনা উৎপাদনের পাশাপাশি মাছ চাষ করে আসছে।
উৎপাদন থেকে উপার্জিত অর্থ সংস্থাটির অ্যাকাউন্টে জমা হতো। গত ৫ আগস্ট সরকার উৎখাতের পর দুর্বৃত্তরা ওই জমিটি দখলে নিতে তৎপর হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) স্থানীয় একদল দুর্বৃত্ত জমিটি দখল করে নেয়। এ সময় হ্যাচারে থাকা প্রশিকার কর্মকর্তা কর্মচারীদের মারধর করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
দখল বেদখলের বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার স্থানীয় থানা এবং সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেনা সদস্যদের কাছে একবার মুচলেকাও দিয়েছে সিরাজুল ইসলাম নামে দখলকারী এক ব্যক্তি। এরপরও তারা ওই জায়গা দখল করে নেয়। এর আগে গত ১৬ আগস্ট, ২১ সেপ্টেম্বর, ২৭ অক্টোবর তিনদফা দখলের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।
প্রশিকার পরিচালক আব্দুস সোবহান বলেন, প্রশিকার মালিকানা নিয়ে ঢাকা অফিসে বিরোধ ছিল। যেটা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে সিএমপি ৪৮৬/২০ মোকদ্দমায় নিষ্পত্তি হয়েছে। রায় প্রশিকার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. কাজী ফারুক আহম্মেদের পক্ষে এসেছে। তিনি সেখান থেকেই প্রশিকা পরিচালনা করছেন। ২০০১ সালে ৫.৬৭ একর জমি ক্রয় করে প্রশিকা। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৫০ কোটি টাকার বেশি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আদালতে পরাজিত ব্যক্তিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা প্রশিকার সম্পত্তিগুলো জোর করে দখলে নিয়ে বিক্রি করে নগদ অর্থ নিয়ে চম্পট দিচ্ছে। যারা ধারাবাহিকতায় শিরোমনিতেও অবস্থিত খামারে হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়। আর এ কাজ বাস্তবায়ন করেছে বহিষ্কৃত উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও মো. রবিউল ইসলাম, একসময় প্রশিকায় চাকরি করা শেখ সাহিদ হোসেন, মো. সিরাজুল ইসলাম, মো. কামরুজ্জামান, কাজী মো. সালাহউদ্দিন, কাজী রনিমুল আকাশসহ কয়েকজন দুর্বৃত্ত।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, তারা এর আগেও কয়েকদফা চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। পরে মঙ্গলবার স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাদের সহযোগিতায় খামারে থাকা কর্মচারীদের উচ্ছেদ করে দেয়। এ সময় তারা খামারের ঘরবাড়ি তালা ভাঙচুর করে দখল করে নেয়। এ উচ্ছেদ কাজে সহযোগিতা করেন খানজাহান আলী থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ। আর থানা বিএনপির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান এ দখল কাজে পেছনে থেকে নেতৃত্ব দেন।
খামার দখল নেওয়ার বিষয়ে নিজেকে প্রশিকার উপপরিচালক দাবি করে মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রশিকার প্রতিষ্ঠাতা ডা. কাজী ফারুক হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়। পরে রোকেয়া ইসলাম নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পায়। তার নেতৃত্বে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। আমরা এতদিন এখানে আসতে পারিনি। ৫ আগস্টের স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর আমরা দখলে নিয়েছি।
সেনাবাহিনীর কাছে দেওয়া মুচলেকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম পরে আমার কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়। এ বিষয়ে তিনি আর কথা বলতে চাননি।
দখল কাজে জড়িত থাকার বিষয় অস্বীকার করে কাজী মিজানুর রহমান বলেন, আমি ঘটনার সময় সেখানে যাইনি। তবে বিষয়টি আমি আগে থেকেই জানি। দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম যে মিটিয়ে দিতে। পরে কি হয়েছে জানি না।
খানজাহান আলী থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, ঘটনাটি আমার বাড়ির পাশে। আমি ওই দিন উভয় পক্ষকে কাগজপত্রের মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ দিয়েছি। এর বেশি কিছু করিনি।
খানজাহান আলী থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, ওই জমি নিয়ে প্রশিকার দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। দখলের বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। আমরা অনুসন্ধান চালাচ্ছি।
Discussion about this post