বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে যে সকল প্রবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন তাদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে ভূক্তোভোগী সৌদি প্রবাসীরা। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এই দাবি জানান। এ সময় সৌদি ফেরত প্রবাসীদেরকে সরকারি খরচে বিভিন্ন দেশে পুনরায় পাঠানোর দাবিও জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সৌদি ফেরত প্রবাসী শাহিদ। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা জানি প্রবাসের মাটিতে মিছিল, মিটিং ও আন্দোলন নিষিদ্ধ। কিন্তু যখন আমরা দেখলাম স্বৈরাচারী হাসিনা এ দেশের ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে তখন আমরা প্রবাসীরা চুপ থাকতে পারি নাই। বিবেকের তাড়নায় আমরা জীবন বাজি রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে মানববন্ধন ও মিছিলে অংশগ্রহণ করি। এর ফলে সে দেশের আইন লঙ্ঘন করা হয়। সে দেশের আইন লঙ্ঘন করার কারণে সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থান থেকে সৌদি পুলিশ আমাদেরকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। দীর্ঘ ৪১ দিন কারা বরণ শেষে শূন্য হাতে আমরা দেশে ফেরত আসি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যে সকল প্রবাসী গ্রেপ্তার হয়েছিল তাদের ডাটা তৈরি করে পুনর্বাসন ও আর্থিক অনুদানের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করতেছি যে দীর্ঘ দুই মাস এই সরকারের সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত আমাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করে নেই। যার প্রেক্ষিতে আমরা গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করি এবং তারপর আমরা বিভিন্ন জেলার প্রশাসকের বরাবর স্মারক লিপি দেই। এরপরেও আমরা কোন সাড়া পাই নাই।’
ভূক্তোভোগী প্রবাসীদের দাবি তুলে ধরে শাহিদ বলেন, ‘দেশে ফেরত আসায় হঠাৎ বেকার হয়ে পড়া প্রবাসীদেরকে এককালীন নগদ সহায়তা প্রদান করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের জন্য বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না করা পর্যন্ত দেশে কর্মসংস্থানের তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করা প্রবাসী সাংবাদিক সাইফুল রাজিব বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা আটক হয়ে দেশে ফেরত এসেছেন তারা সবাই শূন্য পকেটে এক কাপড়ে দেশে এসেছেন। এমনকি বাংলাদেশে আসার পর বিমানবন্দর থেকে নিজ বাড়িতে যাওয়ার মতো টাকাও ছিল না অনেকের কাছে। কিন্তু তাদের অনেকেই সৌদি আরবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন কোম্পানিতে বেতন পাওনা ছিল। এই প্রবাসীদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি সৌদি আরবে থাকা তাদের কোম্পানির কাছ থেকে যে টাকা বা বেতন পাবে তা দূতাবাসের মাধ্যমে ফেরত আনার উদ্যোগ নিয়ে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী প্রবাসীদের ১০ দফা দাবি-
১. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে যে সকল প্রবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন তাদের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. সৌদি ফেরত প্রবাসীদের সরকারি খরচে পুনরায় প্রেরণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. দেশে ফেরত আসায় হঠাৎ বেকার হয়ে পড়া প্রবাসীদের এককালীন নগদ সহায়তা প্রদান করতে হবে।
৪. ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের জন্য বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না করা পর্যন্ত দেশে কর্মসংস্থানের তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৫. সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোতে প্রবাসী বান্ধব কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে।
৬. প্রবাসে যাওয়ার সময় প্রবাসীদের বিভিন্ন ব্যাংকগুলো সহজ শর্তে তিন কার্যদিবসের মধ্যে কোনো জামিন ছাড়া ঋণ দিতে হবে।
৭. বিদেশে যাওয়ার জন্য যে পাসপোর্টটি বানানো হয় সে পাসপোর্টটি কোনো রকম ভোগান্তি ছাড়া অতি দ্রুত সময়ে সরবরাহ করতে হবে।
৮. বিভিন্ন মেডিকেলগুলোতে কোনো কারণ ছাড়া যে মেডিকেল আনফিট দেখানো হয় এই ধরনের মেডিকেলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৯. প্রবাসে যাওয়ার পর সেই প্রবাসী তার কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেল কিনা এবং ঠিকমতো বেতন পাচ্ছে কিনা দূতাবাস ও কনস্যুলেট নিয়মিত খোঁজখবর নিতে হবে।
১০. কোনো প্রবাসী দেশের বাইরে আহত হলে তার যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং মারা গেলে সরকারি খরচে লাশ দেশে আনতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, সৌদি ফেরত প্রবাসী মিনাল মাহমুদ, আব্দুল নূর, নিশাত ও আলীসহ ৪৯ জন প্রবাসী।
উল্লেখ্য: গেল ১৯ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করে বিক্ষোভ করায় ২২৮ বাংলাদেশিকে আটক করে সৌদি আরব পুলিশ। পরে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুস প্রচেষ্টায় তাদের মুক্তি দেয়া হয়। প্রায় ৪১ দিন কারাবরণ করার পর ৩০ আগস্টের পর বিভিন্ন ধাপে তারা দেশে ফেরত আসে।
Discussion about this post