জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে ২০২৪ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে নরওয়ের নোবেল পুরস্কার প্রদান কমিটি। সূত্রের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে রয়টার্স।
আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ঘোষিত হবে ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম। আর শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা শুরু হবে ১১ অক্টোবর।
জাতিসংঘ মহাসচিবের পাশাপাশি এ বছর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হিসেবে আরও মনোনীত করা হয়েছে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য নিবেদিত জাতিসংঘের সংস্থা দ্য ইউনাইটেড নেশন্স প্যালেস্টাইনিয়ান রেফিউজি এজেন্সি (আনরোয়া) এবং জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ড অব জাস্টিসকে (আইসিজে)।
প্রতি বছর শান্তি, সাহিত্য, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নশাস্ত্র, চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং অর্থনীতি— এই ছয়টি খাতে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
শান্তি ব্যতীত বাকি ৫টি খাতে পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন এবং প্রদানের ব্যাপারটি দেখভাল করে সুইডিশ রয়্যাল একাডেমি; আর শান্তিতে নোবেলের প্রার্থী মনোনয়ন ও পুরস্কার প্রদানের দায়িত্বে রয়েছে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি।
সূত্র জানায়, এ বছর শান্তি পুরস্কারের জন্য মোট ২৮৬টি মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়। রাশিয়ার সাবেক বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কিও সম্ভাব্য মনোনীতদের তালিকায় ছিলেন। কিন্তু পরে উভয়কেই বাদ দেওয়া হয়েছে।
গত বেশ কিছুদিন ধরে বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে কাউকে বেছে নেওয়ার বিষয়টি নরওয়ের নোবেল কমিটির জন্য কঠিন কাজ হবে। কারণ, বিশ্বজুড়ে ৫০টির বেশি সশস্ত্র সংঘাত চলছে। গত দুই দশকে এসব সশস্ত্র সংঘাতে প্রাণহানি নাটকীয়ভাবে বেড়েছে।
কেউ কেউ মনে করছিলেন, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে হয়তো এ বছর কেউ শান্তি পুরস্কার পাবেন না। তবে সেসব আশঙ্কাকে পেছনে রেখে ২০২৪ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য বিজয়ীদের মনোনীত করা হয়েছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে সূত্রটি।
নরওয়ের থিঙ্কট্যাংক সংস্থা পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হেনরিক উরদাল রয়টার্সকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত-সংঘর্ষ চলছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তার তৃতীয় বছরে পা রাখতে চলেছে, সুদান গত দেড় বছর ধরে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত হচ্ছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল ও হামাস একে অপরকে ধ্বংসের লক্ষ্যে প্রায় এক বছর ধরে মরণপণ লড়াইয়ে নেমেছে।
এই সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে সহিংসতা এবং রক্তপাত বন্ধের জন্য যারা বা যেসব সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, নোবেল কমিটি এবারের শান্তি পুরস্কারের জন্য তাদেরই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমাদের বিশ্লেষণ তা-ই বলছে।
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিষয়ক ইতিহাসবিদ অ্যাশলে সেভিনের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীজুড়ে যে বৈশ্বিক আইনের শাসন চালু হয়েছিল, তা গত কয়েক বছরে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক আইন ও বিশ্বব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে যারা অবদান রাখছেন, তাদেরই এবারের শান্তি পুরস্কারের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মনোনয়ন দিচ্ছে নরওয়ের নোবেল কমিটি। সে হিসেবে পুরস্কারের জন্য মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জাতিসংঘের মহাসচিব এবং আইসিজের মধ্যে।
অ্যাশলে সেভিন রয়টার্সকে বলেন, এই মুহূর্তে আন্তোনিও গুতেরেস হচ্ছেন জাতিসংঘের শীর্ষ প্রতীক। অন্যদিকে, মানবিক ইস্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত সব আন্তর্জাতিক আইনের সুরক্ষা এবং সেগুলো প্রয়োগের দায়িত্বে রয়েছে জাতিসংঘের আদালত আইসিজে।
Discussion about this post