জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদ নিয়ে সচিবালয়ে হট্টগোলের ঘটনায় ১৭ জন উপসচিবকে শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করেছে এ ঘটনায় গঠিত কমিটি।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান।
তিনি বলেন, ডিসি নিয়োগ নিয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হট্টগোলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৭ জনকে চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এর আগে গত (১১ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে নিয়োগ দিয়ে জারি করা দুটি প্রজ্ঞাপন পুরোপুরি বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ ও হট্টগোল করেন নিজেদের বঞ্চিত দাবি করা কর্মকর্তারা। তারা জনপ্রশাসন সচিবের কাছে দাবি করেন, নতুন ডিসিরা যাতে সংশ্লিষ্ট জেলায় না যান।
বিক্ষোভকারী কর্মকর্তারা দাবি করেন, তারা জনপ্রশাসন সচিবের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে সন্ধ্যায় সচিবালয় ত্যাগ করেন।
তার আগে, অন্তর্বর্তী সরকার গত ৯ সেপ্টেম্বর দেশের ২৫ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেয়। এর একদিন পর ১০ সেপ্টেম্বর আরও ৩৪ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। দুটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মোট ৫৯ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে যারা ডিসি হতে পারেননি, তারা এই দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে এর পরদিন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হট্টগোল করেছিলেন। দিনভর বিক্ষোভের পর ওই দিন সন্ধ্যায় তারা দেখা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সঙ্গে। সেদিনও প্রজ্ঞাপন দুটি বাতিলের আশ্বাস পেয়ে তারা চলে যান।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন দুটি পুরোপুরি বাতিল না করে আট জেলায় নতুন ডিসির নিয়োগ বাতিল করে। এ ছাড়া চার ডিসির জেলা পরিবর্তন করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ আদেশে সন্তুষ্ট হতে পারেননি নিজেদের বঞ্চিত দাবি করা এবং ডিসি হতে আগ্রহী কর্মকর্তারা। সেদিন তারা আবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ ও হট্টগোল শুরু করেন।
ঘটনাস্থল থেকে দেখা যায়, বিকেলের দিকে জনপ্রশাসন সচিব মোখলেসুর রহমান ওই মন্ত্রণালয়ের দোতলায় এক অনুষ্ঠান শেষে বের হলে তাকে ঘিরে ধরেন ৩০ থেকে ৪০ জন কর্মকর্তা। তখন জনপ্রশাসন সচিব তাদের বলেন, ‘আমি কি সরকার? আমি কি এ প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে পারি?’ এ কথা বলে তিনি ভবনের নিচতলায় নেমে যান।
পরে ডিসি থেকে আগ্রহী কর্মকর্তারা নিচতলায় গিয়ে জনপ্রশাসন সচিবকে আবারও ঘিরে ধরেন। এ সময় তারা সচিবকে বলেন, ডিসি পদে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সুবিধাভোগী ও তাদের আশীর্বাদপুষ্ট। কেউ কেউ আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য। অন্যদিকে তারা (বিক্ষোভকারী) আগের সরকারের সময়ে বঞ্চিত। এবারও ডিসি পদে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
জনপ্রশাসন সচিবকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভকারী কর্মকর্তারা অবশিষ্ট ৫১ জেলায় ডিসির নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান। তখন জনপ্রশাসন সচিব তাদের বলেন, বিষয়টি তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে জানাবেন। এ কথা বলে তিনি সচিবালয় ত্যাগ করেন।
Discussion about this post