১১ বছর পর মাউন্ট এভারেস্ট শীর্ষে আরোহণ করে গত দুই দিন ধরে বাংলাদেশের পাহাড় প্রেমি মানুষের মাঝে আনন্দের কম্পন বইয়ে চলেছেন বাবর আলি। দুইদিনের ব্যবধানেই এই পর্বতারোহী আবারো খুশির ঝড় তুললেন পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বত ২৭, ৯৪০ ফুট উচ্চতার মাউন্ট লোৎসে শীর্ষে লাল সবুজের অলংকার এঁকে দিয়ে।
এটিই প্রথমবারের মতো কোন বাংলাদেশি পর্বতারোহীর মাউন্ট লোৎসে শিখর স্পর্শ করার ঘটনা। মূলত বাবর আলির এই অভিযানে মাউন্ট এভারেস্টের পাশাপাশি মাউন্ট লোৎসে শীর্ষে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই এপ্রিলের শুরুতে ছেড়েছিলেন দেশ। বাংলাদেশের পর্বতারোহীরা ইতোপূর্বে মাউন্ট এভারেস্ট শীর্ষে সামিট করলেও একই অভিযানে দুটি আট হাজারি পর্বত কোন বাংলাদেশি সামিট করেন নি। বাবর আলি জোড়া এই আট হাজারী পর্বত (এভারেস্ট এবং লোৎসে) শীর্ষ স্পর্শ করে করেছেন বাংলাদেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা এবং তৈরি করেছেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯ মে এভারেস্ট সামিট করে ক্যাম্প-৪ এ ফিরে আসেন তিনি। এতে সময় লেগেছে প্রায় ১৪ ঘন্টা। স্বাভাবিকভাবেই শরীরও হয়ে যায় ক্লান্ত। ছক আঁকা ছিল সারাদিন বিশ্রাম নিয়ে রাতে আবার শুরু করবেন লোৎসের উদ্দেশ্য যাত্রা। কিন্তু শরীরের অবস্থা বিবেচনা করে তিনি শেরপাদের ছককে নিজের মতো করে পরিবর্তন করেন। নিজেকে ঝুঁকি মুক্ত রাখতে ওই রাত তিনি থেকে যান ক্যাম্প-৪ এ এবং সয়ে নেন এভারেস্ট চূড়া অভিযানের ধকল। এদিকে ওই স্থানের সাথে যোগাযোগ বিভ্রাটে এই বিলম্ব নিয়ে শুরু হয় নানা জল্পনা কল্পনা। বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত ঘুমের পর গতকাল মধ্যরাতে শুরু করেন তার চূড়ান্ত লক্ষ্য মাউন্ট লোৎসের উদ্দেশ্যে যাত্রা। টানা প্রায় দুইদিন অনিশ্চিত অবস্থায় থেকেও অবশেষে আজ সকল সুহ্রদদের উদ্বেগের অবসান ঘটিয়ে আজ সকাল ০৫:৫০ (নেপালের স্থানীয় সময়) এ বাবর আলি স্পর্শ করেন কাঙ্খিত লোৎসে পর্বত শিখর। এই অভিযানের পরিচালক প্রতিষ্ঠান স্নোয়ি হরাইজনের স্বত্বাধিকারী বোধা রাজ বান্ডারি এবং বেসক্যাম্পের ধর্মা তামাং এর দেওয়া তথ্যের বরাতে এই সামিট নিশ্চিত করেন এই অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান। এভারেস্ট এর মতো এই সামিটেও বাবরের সাথে ছিলেন তাঁর শেরপা সাথী বীর বাহাদুর তামাং।
ফরহান জামান বলেন, ‘লোৎসে সামিটের পর বাবর রেডিওতে সামিটের সংবাদ পাঠান বেসক্যাম্পে। বেসক্যাম্পের দায়িত্বশীলরা ওই খুশির খবর পৌঁছে দেন আমাদের কাছে।’
ইতোমধ্যেই বাবর আলির পরিচিতি দেশের গন্ডী পেরিয়ে বিদেশেও উচ্চারিত। দেশের একজন পর্বতারোহী একই অভিযানে দুটি শীর্ষ আট হাজারী পর্বত চূড়া আরোহণের এই সংবাদ বাংলাদেশেকে আন্তর্জাতিক পর্বতারোহণ অঙ্গনে অনেক বেশি সম্মানিত করবে বলে বাবর আলির ক্লাব ভার্টিকাল ড্রিমার্স বিশ্বাস করে। ক্লাবের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘এই সম্মান ও গৌরব সারা বাংলাদেশের’।
চট্টগ্রামের হাটহাজারির সন্তান বাবর আলি পেশায় একজন ডাক্তার হলেও বর্তমানে পুরোদস্তুর পর্বতারোহী। তাঁর এই সাফল্য গর্বিত পিতা-মাতা, ব্যারিস্টার বড় ভাই, বিচারক একমাত্র ছোটবোন এবং মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছোট ভাই দেশবাসীর কাছে বাবর আলির সুস্থ ও নিরাপদে ফিরে আসার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
ফরহান জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখনো আমাদের অভিযান ষেষ হয় নি। নিরাপদে বেসক্যাম্পে ফিরে এলেই আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবো। আশা করছি বাবর ২৩ মে এর মধ্যে বেসক্যাম্পে নেমে আসবে এবং আগামি ৩ জুন দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। বাবরের এই সাফল্যে আমরা গর্বিত এবং অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষী যারা নানাভাবে এই অভিযানে সহায়তা করেছেন সক্লের কাছেই কৃতজ্ঞ।’
এই অভিযানে মূল পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছেন ভিজ্যুয়াল নীটওয়্যার লিমিটেড। এছাড়া সহ-পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ঢাকা ডাইভার্স ক্লাব, বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ব্লু জে, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী, গিরি, ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স। এছাড়াও অভিযানের জন্য গণ তহবিল সংগ্রহে অংশ নিয়েছেন দেশে-বিদেশে নানা সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠন এবং অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষী। অভিযানের সার্বিক সমন্বয় করেছে বাবর আলীর নিজের ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স।
Discussion about this post