দক্ষিণ ও মধ্য-এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে বিশাল এক রেলওয়ে নেটওয়ার্কের প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্রকল্পের আওতায় ভারতের সঙ্গে সরাসরি রেলযোগাযোগ স্থাপন হবে মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের।
বিশাল এই প্রকল্পের ধারণা প্রথম দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সৌদি-আমিরাত-ভারত— তিনটি দেশই এশিয়া অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ও অংশীদার।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এক সরকারি সফরে বর্তমানে সৌদিতে রয়েছেন। রোববার রাজধানী রিয়াদে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান, আমিরাতের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ তাহনূন বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ তিন দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি এই প্রস্তাবটি তোলেন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউস। যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস তাদের নিজেদের প্রতিবেদনে সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন— এমন দু’টি সূত্রের বরাত দিয়ে নিশ্চিত করেছে এ তথ্য।
ভারত মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ীক অংশীদারদের মধ্যে অন্যতম। সৌদি ও আমিরাতে কর্মরত শ্রমিকদেরও একটি বড় অংশ ভারতীয়। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি ও গুরুত্বপূর্ণ বন্দরশহরগুলোর সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হলে মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃস্থানীয় দুই দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করবে।
তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের মাধ্যমে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর যে পদক্ষেপ নিয়েছে চীন— তার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এই প্রকল্পকে সামনে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র।
কয়েক বছর আগে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই মহাপ্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হলে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া এবং পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। আর এই যোগাযোগ স্থাপিত হলে এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে চীনের প্রভাব আরও দৃঢ় হবে।
এশিয়া অঞ্চলে আইটুইউটু নামের একটি আন্তঃদেশীয় জোট সক্রিয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ভারত এই জোটের সদস্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন বাইডেন প্রশাসন কিছুদিন আগে সৌদি আরবকেও এই জোটে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
হোয়াইট হাউসের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১৮ মাস আগে আইটুইউটুর এক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল। তখনও সৌদি আরবের সঙ্গে এই জোটের সম্পর্ক ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাব সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ভারত, আমিরাত ও সৌদির প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এক্সিওস, তবে কেউই এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সূত্র : অ্যারাবিয়ান বিজনেস
Discussion about this post