কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাহজাহান মনির গত বৃহস্পতিবার রাতে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই শাহজাহানের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। সেখানে তিনি জন্ম দেন ফুটফুটে এক কন্যাসন্তানের। বাবা দেখতে পেলেন না সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানকে, আর মেয়ের দেখা হলো না তার জন্মদাতা বাবাকে।
বৃহস্পতিবার রাত সোয়া নয়টায় শাহজাহান মনিরের মৃত্যু হয়। পরের দিন শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে চকরিয়া পৌরসভার দক্ষিণ লক্ষ্যারচর সিকদারপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসংলগ্ন মাঠে তাঁর জানাজা সম্পন্ন হয়। মরদেহ দাফনের সাড়ে আট ঘণ্টা পর গতকাল সন্ধ্যায় চকরিয়া পৌরশহরের ম্যাক্স হাসপাতালে শাহজাহান মনিরের স্ত্রী রুশনি জান্নাত মেয়েশিশুর জন্ম দেন।
শাহজাহান মনিরের পরিবারের লোকজন বলেন, কয়েক মাস আগে শাহজাহানের লিভার ক্যানসার ধরা পড়ে। বাংলাদেশে কয়েক দিন চিকিৎসা করার পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের হায়দরাবাদের এআইজি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে কেমোথেরাপি দেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে দেশে ফিরে চট্টগ্রামের ক্যানসার–বিশেষজ্ঞ আবদুল আউয়ালের তত্ত্বাবধানে ছয়টি কেমোথেরাপি নেন তিনি। তবে অবস্থার অবনতি হলে শাহজাহানকে আবার হায়দরাবাদে নেওয়া হয়। তবে সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে গত মঙ্গলবার শাহজাহান দেশে ফেরেন।
শাহজাহানের স্ত্রী রুশনি জান্নাত বলেন, সানজিদা হক রাফা নামের তাঁদের আড়াই বছর বয়সী আরেকটি মেয়েশিশু আছে। শাহজাহানই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। এখন দুই মেয়েকে নিয়ে অথই সাগরে পড়েছেন তিনি। শাহজাহানের চিকিৎসার পেছনেও অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন কীভাবে সংসার চালাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি শাহজাহানের সঙ্গে রুশনির বিয়ে হয়েছিল। শাহজাহানের লাশ দাফনও করা হয় একই তারিখে। আবার ওই তারিখেই শাহজাহানের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হলো। রাজনীতির পাশাপাশি চকরিয়া পৌরসভার তরছঘাট এলাকায় শাহজাহানের ফার্নিচারের দোকান আছে।
শাহজাহান মনির চকরিয়া কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, চকরিয়া পৌরসভা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, চকরিয়া পৌরসভা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি চকরিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
শাহজাহান মনিরের বন্ধু ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন বলেন, শাহজাহান মনির রাজনীতি করলেও কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল না। সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। তাঁর ক্যানসারে আক্রান্তের খবরে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে অনেকে সহযোগিতা-সহমর্মিতা জানিয়েছেন।
Discussion about this post