তাসফিক হক নাফিও : বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থায় টাকার বিপরীতে বাড়ছে ডলার ও অন্যান মুদ্রার মান। রপ্তানি ব্যায় মেটাতে টান পরেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। এ অবস্থায় প্রবাসীদের বেশি করে রেমিট্যান্স প্রেরণে উৎসাহিত করছে সংশ্লিষ্ট মহল। সে ধারাবাহিকতায় জনতা ব্যাংক দুবাই শাখা বিশেষ রেটে বিনা খরচে রেমিট্যান্স প্রেরণের অফার দিয়ে বিশেষ ক্যাম্পেইন চালু করেছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের এই উদ্যোগে সাধুবাদ জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার করে আমিরাত সংবাদ সহ প্রবাসীরা।
এতে উদ্ভুদ্ধ হয়ে অনেকেই দেশীয় এই প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা পাঠাতে আগ্রহী হয়। কিন্তু এতে বাঁধসাজে ব্যাংকের অফিস আওয়ার।
দুবাই সহ আরব আমিরাত প্রবাসী যারা দেশে রেমিট্যান্স পাঠায় তাদের অধিকাংশই শ্রমিক। যাদের অনেকে মাসে ১ দিনও ছুটি পায় না। আর যারা পায় তাদের সবাই মোটামুটি রবিবারে ছুটি পায়। কিন্তু এখানকার জনতা ব্যাংকের অফিস আওয়ার সোমবার হতে বৃহস্পতিবার সকাল ৮.০০ টা থেকে দুপুর ২.০০ টা পর্যন্ত, শুক্রবার সকাল ৮.০০ থেকে দুপুর ১২.০০ পর্যন্ত। শনিবার, রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি।
অর্থাৎ আরব আমিরাতের সাপ্তাহিক কর্মদিবস গুলোতেই খোলা। যেখানে ভারত ও পাকিস্তানি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এক্সচেঞ্জ সমূহ বেশিরভাগ রাত ১১ টা -১২ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তাই ইচ্ছে থাকলেও অনেকের পক্ষে জনতা ব্যাংক থেকে টাকা পাঠানো সম্ভব হয় না!
তাই স্থানীয় অন্যান প্রতিষ্ঠানের সাথে তাল মিলিয়ে জনতা ব্যাংকের সময় পরিবর্তন করার দাবি প্রবাসীদের। শুধুমাত্র দেশীয় প্রতিষ্ঠান এই আবেগে ছুটি নিয়ে টাকা পাঠানোর মত সুযোগ বা মানসিকতা প্রবাসীদের নেই এবং থাকার কোন যৌক্তিকতাও নেই প্রশাসনিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে অবহেলিত প্রবাসীদের! বলছেন সাধারণ প্রবাসীরা।
আমিরাত সংবাদের পাঠক ফোরামে পাঠকরা মন্তব্য করনে, বাংলাদেশের এই টালমাটাল অর্থনৈতিক অবস্থায় বাংলাদেশের প্রবাসীরা দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা পাঠাক, দেশের অর্থনীতি, দেশের প্রতিষ্ঠান গুলো বৈদেশিক মুদ্রায় সমৃদ্ধ হোক এটা আমরা সবাই চাই। কিন্তু এজন্য ব্যাংক কে বানিজ্যিক চিন্তায় তার প্রতিযোগীদের সাথে মিল রেখে আপডেট হতে হবে।
দেশীয় প্রতিষ্ঠান সমূহের মাধ্যমে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণে নিন্ম লিখিত সুপারিশ করেছে আমিরাত সংবাদ পাঠক ফোরাম।
১. অন্যান এক্সচেঞ্জের মত রাত্রিকালীন এবং বন্ধের দিনেও রেমিট্যান্স প্রেরণ সেবা চালু রাখতে একাধিক শিফটে ব্যাংক পরিচালনার ব্যবস্থা করতে হবে।
২. একাধিক স্থানে ব্যাংকের উপ-শাখা খুলে রেমিট্যান্স প্রেরণ সহজ করতে হবে।
৩. ছুটির দিন গুলোতে বিশেষত মাসের প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন লেবার ক্যাম্প গুলোতে রেমিট্যান্স প্রেরণ জন্য “ওয়ান স্টপ সার্ভিস ” ক্যাম্পেইন আয়োজনের মধ্যে গ্রাহক আকর্ষণ করতে হবে।
৪. রেমিট্যান্সের টাকা বাংলাদেশের জনতা ব্যাংকে প্রেরণ করলে তা গ্রাহকের বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৫. আমিরাতে অনলাইন পেমেন্ট গ্রহনের ব্যবস্থা করে ঘরে বসে রেমিট্যান্স প্রেরণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৬. ব্যাংক টাইমিং পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনে পরিবর্তন আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
৭. ব্যাংক পরিচালনায় আইনি জটিলতা থাকলে বেশ কয়েটিকটি জায়গায় “রেমিট্যান্স সংগ্রহ সেন্টার” খুলে বিকল্প পদ্ধতিতে সেবা প্রদান নিশ্চিত করার দাবি জানায় তারা।
এছাড়াও গ্রাহক বান্ধব উদ্যোগ গ্রহনের মাধ্যমে গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করে এবং অন্যান প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান গুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেদের আপডেট রাখতে জোর দিয়েছে প্রবাসীরা।
এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক শারজা শাখার কর্মকর্তা ইসরায়েল হোসেন জানান, কিছু বিষয় আইনী জটিলতা ও লোকবল সংকট থাকায় সম্ভব হয় না। ব্যাংকিং সময় সকাল ৮ টা হতে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত যার মধ্যে ২ টা পর্যন্ত লেনদেনের সময়। এটা এদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত। তাছাড়া রাতের শিফটের পর্যাপ্ত জনবল এই মুহুর্তে আমাদের নাই এবং বিভিন্ন প্রদেশে পুলিশ পারমিশন না দেয়ার কারণ!
এক্সচেঞ্জ আর ব্যাংক এক নয়। তারপরও প্রবাসীদের স্বার্থে সন্ধ্যা৬ টা হতে রাত ৮ টা পর্যন্ত ব্যাংকে খোলা রাখা বা এই মুহুর্তে নতুন করে কোন শাখা খোলার অনুমোদন কেন্দ্রীয় দিচ্ছে না এমনকি যে সমস্ত স্টেটে জনতা ব্যাংকের শাখা আছে সেখানে নতুন করে এটিম বুথ পর্যন্ত খোলার অনুমতি দিচ্ছে না ।
পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে ছুটির দিনে ক্যাম্পেইন চালানো সম্ভব হয় না । খুব শীঘ্রই জনতা ব্যাংকের ব্যাংকিং ও ট্যাব ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু হবে ফলে আপনারা ঘরে বসে এ্যাপের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণ করতে পারবেন। আপনারা ভালো কিছু পাবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। ইতিমধ্যে বিষয়টি আমি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।
লেখক: আমিরাত প্রবাসী
Discussion about this post