মুহাম্মাদ শোয়াইব,
গতকাল ছিল বিশ্ব পোলিও দিবস। পোলিও একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। চিকিৎসাশাস্ত্রে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াকে পোলিওমায়েলাইটিস বা সংক্ষেপে পোলিও বলা হয়।
বিশ্বকে পোলিওমুক্তকরণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রয়েছে নানা উদ্যোগ। দেশটি 20-30 টিরও অধিক দেশে 60 টিরও অধিক মিশন পরিচালনা করছে পোলিও নির্মূল করার জন্য। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে নিয়া পোলিও নির্মূল কর্মসূচি। এই দুই দেশে দেশটি সাড়ে তিন কোটি শিশুকে পোলিও টিকা দানের ব্যবস্থা করে। এরমধ্যে আফগানিস্থানে 33 লক্ষ শিশুকে দেশটি পোলিও টিকা দানের ব্যবস্থা করে।
বিগত কয়েক বৎসর করুণা ভাইরাসের কারণে পোলিও টিকা কার্যক্রম কিছুটা শিথিল হয়ে গেলেও দেশটির নতুন করে আবার তা শুরু করেছে। এক্ষেত্রে তারা আফগানিস্তান, অ্যাঙ্গোলা, বেনিন, বুর্কিনা ফাসো এবং ক্যামেরুনসহ আরও বেশ কিছু দেশে নতুন করে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি আফ্রিকা ও এশিয়ার আরও 23 টি দেশে পোলিও টিকা কার্যক্রম নতুনভাবে উদ্বোধন করেছে।
দেশটির এসব মানবিক কার্যক্রমের জন্য ইতিমধ্যে তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘের ইউনেস্কো এর পক্ষ থেকে স্বীকৃতি লাভে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ২৪ অক্টোবর বিশ্ব পোলিও দিবস পালন করা হয়। বিশ্বজুড়ে পোলিও রোগ সম্পর্কে ও তা নিরাময়ের জন্য যে বিপুল কর্মকাণ্ড ঘটে চলেছে সেটি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলবার জন্য এবং এই রোগ নিরাময়ের জন্য তহবিলে অর্থবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। যেসব সংস্থা পোলিওমুক্ত বিশ্বগঠনের কাজে অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে তাদের কাজকে সম্মান জানানো এবং এখনও এই রোগ নিরাময়ের জন্য যেসব কাজ অবশিষ্ট সেগুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরাও এই দিবস পালনের একটি উদ্দেশ্য।
পোলিওমাইলিটিস একটি ভাইরাসঘটিত রোগ, সর্বসাধারণের কাছে যেটি পোলিও নামে পরিচিত। এই ভাইরাস দ্বারা মূলত শিশুরাই বিশেষত পাঁচ বছরের কম শিশুরাই আক্রান্ত হয় বেশি। এই ভাইরাসের আক্রমণের ফলে শরীরে পক্ষাঘাত ঘটে এবং মূলত পায়ের দিকটিই আক্রান্ত হয়। এই ভাইরাস অন্ত্রের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে থাকে। বিশ্বজুড়ে এই রোগের প্রকোপ বর্তমানে কমলেও তা সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি এখনও। প্রতিবছর আমেরিকান বিজ্ঞানী জোনাস সালকের জন্ম দিবস স্মরণে এই দিনটি পালিত হয়ে থাকে। জোনাস সালকই সর্বপ্রথম এই পোলিও ভাইরাস নিরাময়ের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সহায়তা করেছিল।
১৯৮৮ সালে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ২৪ অক্টোবর বিশ্ব পোলিও দিবস হিসেবে ঘোষণা ও পালন করে। সেই সময় সারাবিশ্বে ১২৫ টি দেশকে চিহ্নিত করা হয়েছিল যেখানে প্রতিবছর তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার মানুষ পোলিও আক্রান্ত হয়। বিশ শতকের পাঁচের দশকে জোনাস সালকের নেতৃত্বে তৈরি পোলিও নিরাময়ের ভ্যাকসিনের আরো একটু বিকাশ ঘটিয়ে অ্যালবার্ট সাবিন দুর্বল পোলিও ভাইরাসের নিরাময়ে দ্বিতীয় আরেকটি টিকা তৈরি করেন ১৯৫৭ সালে যেটি মূলত খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।
এই দুটি আবিষ্কারের ব্যাপক ব্যবহার ও সাফল্যের ওপর ভিত্তি করেই পোলিও মুক্ত বিশ্ব গঠনের জন্য ১৯৮৮ সালে তৈরি হয়েছিল গ্লোবাল পোলিও ইরাডিকেশন ইনিশিয়েটিভ। এই সংস্থাটির পাঁচটি মূল অংশীদার যারা পোলিও নিরাময়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করছে এবং এই বিশেষ দিনটি পালনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে তারা হলো- রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, রাষ্ট্রপুঞ্জের শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ, ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।
বিভিন্ন দেশে বিবিধপ্রকার আয়োজন করা হয় বিশ্ব পোলিও দিবস উদযাপন করবার জন্য। এইসব আয়োজন মূলত মানুষকে সচেতন করবার জন্য করা হয়ে থাকে। পোলিওমুক্ত বিশ্বগঠনের যে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে তার প্রচারও করা হয়ে থাকে নানাবিধ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। কোথাও এই নির্দিষ্ট দিনে বিরাট বড়ো র্যালি বের করা হয় রাস্তায়। নানারকম পোস্টার, ব্যানার এই বিরাট পদযাত্রায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এমনকি বাইক বা সাইকেল নিয়ে মিছিলও দেখা যায়।
আন্তর্জাতিক রোটারি বিভিন্ন দেশকে এই দিনটিতে নানারকম ইভেন্ট আয়োজন করবার আহ্বান জানায়। বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন তো প্রতিবছর বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত তাদের সদর দফতর থেকে সরাসরি সম্প্রচার করবার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। জার্মানির এক রোটারি ক্লাবকে এই বিশেষ দিনে পোলিও নিরাময়ের প্রচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্নরকম স্যুপ বিলি করতেও দেখা গেছে। কোথাও বা সাঙ্গীতিক সম্মেলনের আয়োজনও করা হয়ে থাকে যেমনটা করবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল ইংল্যান্ডে।
এছাড়াও বিভিন্ন সেমিনার এবং অন্যান্য মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা পোলিও রোগ এবং তার নিরাময় প্রসঙ্গে মূল্যবান বক্তৃতা দেন। সর্বোপরি এই দিনে বিভিন্ন দেশের ক্লাবে ক্লাবে পোলিও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে ৷ এছাড়া আরো অনেকরকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এই দিনটিকে বিশেষ মর্যাদা সহকারে পালন করা হয়।
Discussion about this post