সাতক্ষীরার প্রতাপনগরে হাওলাদার বাড়ি ভাঙ্গন পয়েন্টে দেশের প্রথম ভাসমান মসজিদ”আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন মসজিদে নুহ (আঃ) এর উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নৌকার ওপরে মসজিদটি স্থাপন করা হয়েছে।মঙ্গলবার জোহর নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে ভাসমান মসজিদটি উদ্বোধন হয়। স্থানীয় মুসল্লিদের সঙ্গে নামাজে শরীক হন মসজিদের নির্মাতা আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। ভাসমান মসজিদটি পরিচালিত হবে হাওলাদার বাড়ি ভাঙন কবলিত মসজিদের কমিটি দ্বারা।
আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৫৫ ফুট বাই ১২ ফুট দৈর্ঘের নৌকার উপর নির্মিত ওই ভাসমান মসজিদে একসাথে প্রায় ৮০ জন মুসাল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদের সাথে আছে মিনি অজুখানা, টয়লেট, সোলার লাইট, সাউন্ড সিস্টেম, কোরআন শরীফসহ বুক শেলফ ইত্যাদি। এ ছাড়া ভাসমান মসজিদে মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য থাকছে একটা ছোট নৌকা।
এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। সময় জার্নাল পাঠকদের জন্য সেটি হুবহু তুলে ধরা হল :
পুরো বিষয়টা নিয়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ভাই জানতে চেয়েছেন। ইতিহাসের অংশ হয়ে যাওয়া বিষয়গুলো সকলের সদয় জ্ঞাতার্থে :
দিনের পর দিন, মাসের পর মাস মানুষগুলো পানিতে আবদ্ধ। বাঁধ ভেংগে প্লাবিত এলাকা সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরের এক মসজিদের ইমাম সাহেব সাতরিয়ে মসজিদে যাওয়ার ভিডিও আমাদের অনেকের হৃদয়ে আলোড়ন তুলেছে।
সরেজমিনে দেখেছি স্থানীয় গুটিকয়েক লোক কোমর সমান পানিতে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করছেন। পানির কারণে জুমার নামাজ পর্যন্ত পড়তে না পারার দুঃখগুলো একেবারে মাঠ পর্যায়ে দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধিভুক্ত এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর অনুমোদিত সংস্থা আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ওদের জন্য ভাসমান মসজিদ তৈরি করবো।
নিত্যদিন পানিতে বাস করা, সকালে ঘুম থেকে উঠে পানিতে নেমে নৌকা করে হাঁট-বাজার, স্কুলে যেতে পারলে এই মানুষগুলো নৌকাতে নামাজ পড়তে অসুবিধা কোথায়। বরঞ্চ বহু দিন ধরে নামাজে না আসায় নামাজ ভুলে যেতে বসা মানুষগুলো এখন থেকে নামাজ আদায়ের দারুণ সুযোগ পাবে।
এ চিন্তার আলোকে গত ২৪শে সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার উক্ত এলাকা থেকেই ভাসমান মসজিদের বিষয়ে ঘোষনা দিই। ঐদিন রাতেই ফাউন্ডেশনের অন্যতম উপদেষ্টা মালয়েশিয়া আই আই ইউ এম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড.এস এম এ মোতাকাব্বের স্যার ভাসমান মসজিদ ডিজাইন করে পাঠান। পরদিন থেকেই শুরু হয় নির্মাণ কাজ।
মাত্র ১১ দিনের মধ্যেই তৈরী হয়ে যায় বাংলাদেশের প্রথম ভাসমান মসজিদ। নামকরণ করা হয় আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন মসজিদে নুহ আলাইহিসসালাম।
অদ্য ৫ই অক্টোবর ২০২১ ইং মংগলবার জোহরের নামাজের মধ্যে দিয়ে ভাসমান মসজিদ উদ্ধোধন করা হয়। প্রায় ৫ লক্ষ টাকা বাজেটের এই মসজিদে অন্তত ৭০ জন মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারবেন।
ভাসমান মসজিদ ভার্সন ২ তথা দুটো নৌকাকে একত্রে করে মসজিদ বানাতে পারলে প্রায় ১৬০ জন মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন। যার ফলে জুমা আদায় করতে বেশ সুবিধা হবে।
বর্তমান এই ভাসমান মসজিদে ৪ জন একসাথে অজু করার জন্য অজু খানা, টয়লেট, কোরান শরীফসহ র্যাক তথা জরুরি সামগ্রীগুলো দেয়া আছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে পানিতে নিমজ্জিত সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরে হাওলাদার বাড়ী জামে মসজিদের পাশেই নব নির্মিত ভাসমান মসজিদ অবস্থান করছে।
হাওলাদার বাড়ী জামে মসজিদের পানি শুকিয়ে ব্যবহার উপযোগী হয়ে গেলে ভাসমান মসজিদটি পাশের বন্যার্ত এলাকায় পানিতে নিমজ্জিত অন্য মসজিদের পাশে স্থানান্তরিত করা হবে।
যদি কখনো পুরো সাতক্ষীরাতে পানিতে নিমজ্জিত মসজিদ না থাকে তবে এই মসজিদটাকে শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত করা হবে।
যদি ভাসমান শিক্ষা কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা না থেকে তবে এটি ভাসমান স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র করা হয়ে যাবে।
মোবাইল ক্লিনিক বা ভাসমান স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা না থাকলে তবে উপরের পাটাতনগুলো খুলে নৌকাগুলো ফাউন্ডেশনের আত্মনির্ভরশীলতা প্রকল্পের অধীন স্থানীয় স্বল্প আয়ের মানুষকে দিয়ে দেয়া হবে।
বন্যার্ত এলাকায় বিকল্প নামাজের স্থান হিসেবে আমরা শুধুমাত্র মডেল হিসেবে এই ভাসমান মসজিদটা তৈরী করেছিলাম। কিন্ত এ মসজিদটা পেয়ে স্থানীয় মানুষের মাঝে যে ঈদের আনন্দ দেখেছি, বহুদিন পরে শুকনো স্থানে একসাথে নামাজ আদায় করতে পেরে নামাজ শেষে মুনাজাতে যেভাবে তাঁরা চোখের অশ্রু ঝরিয়েছেন তা দেখে সহজেই ভাসমান মসজিদের প্রয়োজনীয়তা আমাদের হাঁড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।
আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের সম্মানিত দাতা শুভাকাঙ্ক্ষীগণের অর্থায়নে এই ভাসমান মসজিদ তৈরী হয়েছে। যদিও অনেক টাকাই এখনো লোন হয়ে আছে। ইতোমধ্যে যারা যারা এই মহতী কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেছেন সকলকে মহান রব যথোপযুক্ত উত্তম প্রতিদান দিন।
স্পেশালি মিডিয়ার ভাইদের জন্য: আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন মসজিদে নুহ আলাইহিসসালাম উদ্ধোধন করেন ভাসমান মসজিদের স্বপ্নদ্রষ্টা পরিকল্পনাকারী আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দীন। প্রথম নামাজে ইমামতি করেন সাতরে মসজিদে যাওয়া সেই ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মইনুর রহমান। সাতক্ষীরার আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের জেলা প্রতিনিধি আশিকুর রহমানের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়।
Discussion about this post