মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ:
মহান আল্লাহ নারী-পুরুষকে আলাদা বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। দাম্পত্য জীবনে প্রেম-ভালোবাসা, মায়া-মমতা, অনুগ্রহ, সুখ-শান্তি মজুদ রেখেছেন। ইরশাদ হচ্ছেÑ ‘হে মানবসমাজ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী’ (সূরা আন নিসা)।
নারী কে? নারীর অধিকার কী? নারীর পরিচয়, নারীর অধিকার, প্রয়োজনীয় বিধিবিধান সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপন আল কুরআনে রয়েছে। পুরুষের বিপরীত লিঙ্গ নারী। পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী। ইরশাদ হচ্ছে- ‘আর আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের থেকে জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জোড়া থেকে তোমাদের জন্য পুত্র ও নাতিদের সৃষ্টি করেছেন’ (সূরা নাহল)।
মহান আল্লাহ নির্ধারিত গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে নারী-পুরুষ সৃষ্টি করেন। যখন তারা মৌলিক গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য থেকে বের হন, তখনই তারা ছিটকে পড়েন। বিশ^নবী সা: বলেন, ‘নিশ্চয় নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে।’ নারী-পুরুষের পার্থক্য কেবল লিঙ্গগত নয়, প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, কর্ম-কৌশলে পার্থক্য রয়েছে। পুরুষের কাজ ঘরের বাইরে, নারীর কাজ ভেতরে। নারী প্রজন্মের পর প্রজন্ম জন্ম, সন্তান লালন-পালন ও স্বামীর সম্পদ রক্ষায় নিদ্র্রাহীন প্রহরী। ইসলাম ধর্মে নারীরা নবী, রাসূল, ইমামতি, সাধারণ মানুষের নেতা হবে না। ইরশাদ হচ্ছে- ‘পুরুষকে নারীর ওপর দায়িত্ববান করা হয়েছে।’ ইসলামী আইনে কোনো নারী নিজের স্বামীকে তালাক দেয়ার অধিকার রাখেন না স্বামীর অনুমতি ব্যতীত।
ইসলামী সংস্কৃতিকে অপসংস্কৃতি গ্রাস করে আসছে। কালের আবর্তন-বিবর্তনে সময়ের পরিবর্তন ঘটেছে। জাহেলি যুগে সম্পদে নারীর কোনো অধিকার ছিল না। বিশ^নবী সা: নারীকে অধিকার দিয়েছেন। একজন নারী বাবা-মা ও স্বামীর সম্পদে অধিকার পাবেন। ইরশাদ হচ্ছে- ‘একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। আর যদি শুধু নারীই হয় দু’-এর অধিক, তাহলে তাদের জন্য ওই ত্যাজ্য মালের তিন ভাগের দুই ভাগ। আর যদি একজনই হয়, তাহলে সে জন্য অর্ধেক’ (সূরা নিসা)। স্বামীর সম্পদে স্ত্রীর অধিকার রয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে- ‘স্ত্রীদের জন্য তোমাদের ত্যাজ্য সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ যদি তোমাদের কোনো সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে তাহলে তাদের জন্য হবে ওই সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ’(সূরা নিসা-১২)।
ছেলের সম্পদে মা অংশ পাবেন। ইরশাদ হচ্ছে- ‘মৃতের কোনো পুত্র থাকলে মা-বাবার প্রত্যেকের জন্য (সন্তানের) ত্যাজা সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ। যদি পুত্র না থাকে এবং মা-বাবাই ওয়ারিশ হয়, তবে মা পাবেন তিন ভাগের এক ভাগ’ (সূরা নিসা-১১)। নারীর অধিকার সর্বক্ষেত্রে। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন- ‘নারীরা তোমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ এবং তোমরাও নারীদের পোশাক-পরিচ্ছদ’। বিশ^নবী সা: বলেন, ‘যাকে চারটি জিনিস দান করা হয়েছে, তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের শ্রেষ্ঠ বস্তু দান করা হয়েছে। কৃতজ্ঞা আত্মা, জিকিরকারী রসনা, বিপদে ধৈর্যধারী শরীর ও বিশ^স্ত নারী’। ‘পৃথিবীর সব কিছুই সম্পদ, সম্পদগুলোর মধ্যে চরিত্রবান ও বিশ্বস্ত নারীই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ’। ‘যে ব্যক্তি দুটি কন্যাসন্তানকে বয়োপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করবে সে ও আমি কিয়ামতের দিন এতটুকু কাছাকাছি থাকব’। ‘তোমাদের মধ্যে যারা নিজের স্ত্রীর কাছে ভালো তারা ইসলামের কাছেও ভালো। আমি আমার স্ত্রীদের কাছে ভালো ব্যক্তি।’
‘সচ্চরিত্র ও স্বীয় স্ত্রীদের প্রতি সহৃদয় ব্যক্তি নিশ্চয় পূর্ণ ঈমানদার’। ‘যখন স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের সাথে প্রেম চাউনির বিনিময় করে, তখন আল্লাহ পাক উভয়ের দিকে করুণার দৃষ্টি দেন। অতঃপর যখন স্বামী-স্ত্রী হাত ধরে, তখন তাদের অঙ্গুলির ফাঁক দিয়ে পাপরাশি ঝরে পড়ে।’
বর্তমান সমাজে মুখোশধারী নেতারা নারীকে পর্দার বাইরে আনার চেষ্টা করছে। পর্দাই হচ্ছে নারীর মর্যাদা ও সম্মান। শান্তি লাভের উপায়। ইরশাদ হচ্ছে- ‘মহিলারা যেন বড় চাদরের ঘোমটা দিয়ে তাদের চেহারা আবৃত করে রাখে’ (সূরা নূর-৩০)। ইরশাদ হচ্ছে- ‘যখন তোমরা (পুরুষরা) নিজেদের ব্যবহারের জন্য তাদের (মহিলাদের) কাছে কোনো জিনিস চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে’ (সূরা আহজাব-৫৩)। পর্দা করা ফরজ। এক শ্রেণীর মানুষ পর্দাকে অস্বীকার করে। ইরশাদ হচ্ছে- ‘হে রাসূল! মুমিন পুরুষদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং যৌন পবিত্রতা রক্ষা করে চলে। এটাই হলো তাদের জন্য পবিত্রতম পন্থা। হে রাসূল! আপন বিবি, কন্যা এবং মুমিন মহিলাদের বলে দিন, তারা যেন তাদের পবিত্র শরীর ও মুখমণ্ডল হিজাব দিয়ে আবৃত করে রাখে। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে না। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আহজাব-৫৯)। আল্লাহ আরো বলেন, ‘মহিলারা তাদের পা মাটির ওপর এমনভাবে ফেলবে না, যাতে পুরুষদের কাছে তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে পড়ে’(সূরা নূর-৩১)।
পর্দা করা ফরজ। পর্দা ছাড়া নারীর অস্তিত্ব বিলীন। পরকালে শাস্তির কারণ। যারা নারী অধিকারের কথা বলেন, তারা নিজেরাই, নিজের স্ত্রীর অধিকার দিতে ব্যর্থ? নিজের স্ত্রীকে মোহরানা থেকে বঞ্চিত করে যৌতুক নিয়ে বিয়ে করেন। নিজের সব সম্পদ ছেলের নামে লিখে দিচ্ছেন। এ ছাড়া পর্দার মা-বোনকে মিটিং, সভা, সমাবেশ, মিছিলে সামনে দাঁড় করিয়ে, পুরুষ নামের মানুষ নরপশুটি থাকছে মিছিলের পেছনে। যত ঝড়-ঝাপটা, মারামারি, সব নারীর ওপর পড়ছে। নারীরা নিজের অধিকার আদায় করতে এসে, অধিকার হারিয়ে বাড়ি ফিরছে। এটা কোন ধরনের সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা? পৃথিবীতে কোনো জাতি-গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় নারীর অধিকার দিতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। ইসলাম ধর্মই একমাত্র নারীর অধিকার দিয়েছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম, সাম্যের ধর্ম। এ ধর্মে কোনো ভেদাভেদ নেই। আমরা যেন নারী অধিকারের পাশাপাশি সব অধিকার ফিরে পাই, সেই প্রত্যাশায়।
সাংবাদিক ও প্রভাষক, আরবি, পঞ্চগড় নূরুন আলা নূর কামিল মাদরাসা
Discussion about this post