মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে আরও ৫৩ হাজার ৩৪০টি পরিবার নতুন ঘর পেতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন অসহায় মানুষদের এসব ঘর দেওয়া হচ্ছে।
আগামী রোববার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিনামূল্যে দুই শতক জমিসহ সেমিপাকা এসব ঘর পরিবারগুলোর কাছে তুলে দেবেন সরকারপ্রধান।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এসব তথ্য জানান। ডিসেম্বরের মধ্যে আরও এক লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর প্রদানের পরিকল্পনার কথাও জানান মুখ্য সচিব। এ সময় তিনি করোনার গণটিকা কার্যক্রম আগামী জুলাই থেকে ফের শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহ ও ভূমিহীন থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়নে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ঘর পেয়েছেন সারাদেশের ভূমি ও গৃহহীন ৬৯ হাজার ৯০৪টি পরিবার। গত ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা গৃহ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধনও করেন প্রধানমন্ত্রী।
ড. কায়কাউস বলেন, একসঙ্গে এত মানুষকে বিনামূল্যে বাড়িঘর দেওয়ার ঘটনা পৃথিবীতে নজিরবিহীন, পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম ও সর্ববৃহৎ। সরকারের এই উদ্যোগে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও যুক্ত হয়েছেন। অসহায় মানুষকে এভাবে ঘর দেওয়াকে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ বলা যায়। বিশ্বে এটা নতুন মডেল, আগে কখনও কেউ যেটা ভাবেনি। প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম বিশাল ও মানবিক এ উদ্যোগ সারাবিশ্বের কাছে দারিদ্র্য বিমোচনে সক্ষমতা প্রমাণেরও একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গৃহ নির্মাণের জন্য ঋণ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ভূমিহীনদের ডেকে এনে তাকে জমির মালিক ও ঘর করে দেওয়ার এমন নজির একটি মডেল প্রকল্প, গর্ব করার বিষয়। প্রধানমন্ত্রী এই সংকটের মধ্যেও ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’। সেই প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সরকার অসহায় ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘর দেওয়া ছাড়াও তাদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ দেবে বলেও জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কেউ অনিচ্ছাকৃতভাবে অনিয়ম করে থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখানে অনিয়মের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স।
ঘর দেওয়ায় আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ সংক্রান্ত আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক অভিযোগ পেয়েছি। এর মধ্যে ৯৯ শতাংশই সঠিক ছিল না। যার স্বার্থহানি হয়েছে, তিনি এমন অভিযোগ করেছেন। তবে বিভিন্নভাবে বা গণমাধ্যমে অভিযোগ এলে তদন্ত ও অভিযোগ প্রমাণ হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুখ্য সচিব বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি, জুলাই মাস থেকে হয়তো আবার গণহারে টিকাদান শুরু করতে পারব। টিকা পেতে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাও যোগাযোগ করে চলেছি। ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটা দেশের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রত্যাশা করছি খুব দ্রুতই আমরা টিকা পাব। প্রতিদিনই অন্তত একটা দেশ বা কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছি। একই সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশেও টিকা উৎপাদন করার চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, টিকা কেনার জন্য ১৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ আমরা কিন্তু কারও দয়া চাই না। প্রধানমন্ত্রীও কিন্তু সব সময় বলছেন, আমাদের ফ্রি দরকার নেই। আমরা টাকা দিয়ে কিনব। যেখানে পাওয়া যায় সেখান থেকে কেনা হবে এবং আমরা অনেকদূর এগিয়েছি।
টিকা সংকট প্রসঙ্গে ড. কায়কাউস বলেন, বর্তমানে কেউ টিকা বিক্রি করছে না। আমরা পৃথিবীর সব জায়গায় চেষ্টা করেছি প্রথম দিন থেকে। তখন আমাদের কাছে যে অপশনটা ছিল সেটা আমরা গ্রহণ করেছি এবং কম দামে পেয়েছি।
টিকার স্বল্পতার কারণে ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিষেধকটি পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি এবং প্রায়োরেটি দিচ্ছি- যারা মেডিকেল স্টুডেন্ট আছেন, কিন্তু কভিড পরিস্থিতিতে কাজ করছেন তাদেরকে। এ জন্য তাদের দিয়েছি। যেহেতু আমাদের কাছে টিকা কম আছে। কাল যদি এক মিলিয়ন পাই, তখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আবার দেওয়া হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মাহবুব হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি।
Discussion about this post