বাংলাদেশে ১৯৮৮ সালের পর এবারের বন্যা সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ। মঙ্গলবার জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ)-এর পক্ষ থেকে এমন আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। ২১ জুলাই সংস্থাটির নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলা হয়, আগামী মাসের আগেই পানি কমতে শুরু করবে; এমন সম্ভাবনা কম।
ওসিএইচএ জানিয়েছে, বন্যায় এখন পর্যন্ত দেশের ১৮টি জেলায় ২৪ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়ে সরকারি আশ্রয়শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে ৫৬ হাজার মানুষ। এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫৪ জনের। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ বাড়িঘর ডুবে গেছে। বাঁধ ও বাঁধের মতো সুরক্ষা অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জাতিসংঘ এবং মানবিক অংশীদাররা জরুরি খাবার প্যাকেট, পানি পরিশোধন সুবিধা, স্বাস্থ্যবিধি ও ডিগনিটি কিট এবং জরুরি আশ্রয়ের মতো বিষয়গুলোতে সরকারের প্রচেষ্টায় সমর্থন দিচ্ছে।
সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য সম্প্রতি জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাগুলোকে প্রাথমিকভাবে ৫ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারের তহবিল দিয়েছে ইউএন সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স ফান্ড।
এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২১ জুলাই পর্যন্ত দেশের ২০টি জেলার ৯৮ উপজেলার ৬০৩ ইউনিয়ন বন্যা উপদ্রুত। জেলাগুলো হচ্ছে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, ফেনী, শরীয়তপুর, ঢাকা ও নওগাঁ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন বলেন, ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হচ্ছে। এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। আমরা প্রতিদিন অল্প অল্প করে হিসাব করছি। প্রতিদিন সেটি আপডেট করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী প্রথম পর্যায়ের ফসলের ক্ষয়ক্ষতির একটা হিসাব দিয়েছেন। কিন্তু সেটি চূড়ান্ত নয়। এখন আবার নতুন করে পানি বাড়ছে। আমরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ, আশ্রয়কেন্দ্র, বরাদ্দ নিয়ে এখন ব্যস্ত। পাশাপাশি কিছু কিছু হিসাব নেওয়া হচ্ছে। তবে এখন চূড়ান্তভাবে কিছু বলার সময় এখনও আসেনি।
কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রথম পর্যায়ের বন্যায় প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩৪৯ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এই ক্ষতি কমিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিকল্প বীজতলা তৈরি, ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে বিকল্প ফসলের চাষের ব্যবস্থা, নিয়মিত আবহাওয়া মনিটরিং প্রস্তুতি চলছে, যাতে বন্যার কারণে ফসলের ক্ষতি মোকাবিলা করা যায়।
Discussion about this post