যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অবস্থায় মারা যাওয়া সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণের বারকোট গ্রামের আকরাম হোসেনের ক্রয়কৃত সম্পত্তি ও ভিটেমাটি দখল নিতে মরিয়া তারই সৎ ভাই ও ভাতিজারা। জাল দলিলের মাধ্যমে তারা সম্পত্তি দখলও করে রেখেছে। আকরাম হোসেনের বিধবা স্ত্রী এবং সন্তানদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। নিজের স্বামীর ভিটেমাটিতে যেতে পারছেন না মৃত আকরাম মিয়ার স্ত্রী তৌমুননেছা। বুধবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তৌমুননেছা এসব কথা তুলে ধরেন।
তিনি স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি ও ভিটেমাটিতে যেতে না পেরে দুঃখে অনেকবার যুক্তরাজ্যে ফেরত যাওয়ার পরিকল্পনাও করেছিলেন। কিন্তু অপরাধীদের ছাড় না দেয়ার মানসিকতা থেকে তিনি সিদ্ধান্ত বদল করেছেন। তিনি দখলকারীদের কবল থেকে তার স্বামীর সম্পত্তি ও স্মৃতিচিহ্ন ভিটেমাটি ফেরত পেতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পিতৃহারা দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে আমি যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছি। দীর্ঘ সময় প্রবাসে থাকলেও নাড়ির টানে দেশে ফিরে আসি বার বার। ভিটেমাটি থাকার পরেও নিজ দেশে আমরা পরবাসী। বাড়ি আছে, ঘর আছে, রয়েছে জমিজমা। কিন্তু দেশে এলেও স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়িতে উঠতে পারছি না জীবনের শঙ্কায়। আর সেই শঙ্কার কারণ দেশে গ্রামের বাড়িতে থাকা আপনজনরাই। সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য তারা আমাদের মেরে ফেলতে চায়।
তিনি বলেন, তার স্বামী আকরাম মিয়াকে গ্রামের লোকজন বাবু লাল নামে বেশি চিনতেন। ১৯৭১ সালে তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন। সেখানে উপার্জিত অর্থ দিয়ে দেশে বাড়ি ও ক্ষেতের জমিসহ প্রায় ২৮ থেকে ৩০ কেদার জমি (এক হাজার ডিসিমেল) কিনেছেন তিনি। ১৯৯৯ সালে তিন সন্তানকে ছোট রেখে তিনি মারা যান। এরপর থেকেই সম্পদ গ্রাস করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারই সৎ ভাই ছাবুল ও ছবুল মিয়া গংরা। আমরা দেশে আসতে চাইলে তারা আমাদের বাধা দেয়। নানাভাবে প্রাণনাশের হুমকিও দিতে থাকে। এরপরেও মাতৃভূমির টানে স্বামীর স্মৃতিবিজড়িত ভিটেমাটিতে অবস্থান করতে আমরা দেশে আসি। কিন্তু তাদের বাধার কারণে আজ পর্যন্ত নিজের ভিটায় যেতে পারিনি।
তিনি আরো বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর জায়গা দেখাশোনার জন্য এক আত্মীয় ব্যাংকার নিছাই মিয়াকে আমোক্তার নিযুক্ত করে দেন। কিন্তু গত ২০ বছর ধরে ছাবুল ও তার ভাই ছবুল এই সম্পদের দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। এর মধ্যে ছবুল নিজেও যুক্তরাজ্যে বসবাস করছে। সেখান থেকেই তিনি কলকাঠি নাড়েন। সব সময় আমাদের ভয়ভীতির মধ্যে রেখেছে। তারা আমাদেরকে সম্পত্তির মায়া ছেড়ে যুক্তরাজ্যে থাকার নির্দেশনা দিয়ে দেশে এলে প্রাণনাশের হুমকিও দেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হলেও কোনো প্রতিকার পাননি বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, গত কিছু দিন হল আমার সন্তানকে নিয়ে দেশে এলেও আমি বাড়িতে গিয়ে উঠতে পারছি না। নিজের বাড়িঘর থাকতেও আমার সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। সর্বশেষ গত ৬ জুন সকালে আমমোক্তার নিছাই মিয়ার ওপর হামলা করে তাকে গুরুতর আহত করে ছাবুল মিয়া গংরা। এ ঘটনায় ৮ জুন গোলাপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
Discussion about this post