ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পর করোনার ‘ডেঞ্জার জোন’ হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম। যতবেশি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে, ততবেশি শনাক্ত হচ্ছেন রোগী। এতদিন ধীরগতিতে সংক্রমণ বাড়লেও অলিখিত লকডাউন ঢিলেঢালা হতেই আক্রান্তের গ্রাফ দ্রুত উপরের দিকে উঠছে। তালিকায় তিন নম্বরে উঠে এসেছে চট্টগ্রামের নাম। শনিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৭১৬ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৩২ জন। সুস্থ হয়েছেন ১০০ জন। গত এক সপ্তাহেই শনাক্ত হয়েছেন বেশিরভাগ রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও বলছে, দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগের পরই চট্টগ্রামে বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। সাতকানিয়া, পটিয়া, বাঁশখালী, নগরীর দামপাড়া, সরাইপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় করোনা রোগী বাড়ায় এসব এলাকাকে ‘হটস্পট’ বলা হচ্ছিল। কিন্তু এখন গোটনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত বাড়ছে। এতে দায়িত্ব পালনে কিছুটা ভাটা পড়েছে।
চট্টগ্রাম ইপিজেডে সচল রয়েছে ১৪৮টি কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কাজ করছেন দুই লাখের মতো পোশাক শ্রমিক। এ ছাড়া কর্ণফুলী ইপিজেডে প্রায় ৫০টি গার্মেন্টে কাজ করছেন ৭০ থেকে ৮০ হাজার শ্রমিক। কারখানাগুলোতে অনেক শ্রমিক করোনার উপসর্গ নিয়ে কাজ করছেন। সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামে যতবেশি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, ততবেশি করোনা রোগী পাওয়া যাচ্ছে। ক্রমান্বয়ে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। রোগীদের একটি অংশ ঘরে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। যাদের অবনতি ঘটছে, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার জানিয়েছেন, লকডাউন শিথিল করায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে না। এতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। করোনা আক্রান্তের হার বাড়লেও মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না। নগরীর রাস্তাঘাট, অলিগলিতে মানুষ আর মানুষ। হাট-বাজারগুলোর পাশে রীতোমতো যানজট তৈরি হচ্ছে। কোথাও সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ মে চট্টগ্রামের বিআইটিআইডিতে ২৩১টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৯ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মহানগরসহ চট্টগ্রামের ৩৮ জন। সিভাসুতে ৪৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ২০ জনের পজিটিভ এসেছে। তাদের ১২ জন চট্টগ্রাম জেলার। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ৯০টি নমুনা পরীক্ষা করে চট্টগ্রামের ৪৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়। গত ১৪ মে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের চারটি ল্যাবে ৩৬৯টি নুমনা পরীক্ষা করে ৯৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিআইটিআইডিতে ২৫৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩৩টি পজিটিভ পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শনাক্ত করে আক্রান্তদের পৃথক করা না গেলে ঠেকানো যাবে না সংক্রমণ।
Discussion about this post