করোনা মহামারীতে নিউইয়র্ক হাসপাতালগুলোতে যুদ্ধ ময়দানের অবস্থা বিরাজ করছে। স্রোতের মতো আসছে কোভিড-১৯ রোগী। কোথাও তিলধারণের ঠাঁই নেই। ফ্লোরে বা মেঝেতেও আর জায়গা হচ্ছে না। বারান্দাতেও উপচেপড়া ভিড়।
সেখানেই দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা। একসঙ্গে এত রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার-চিকিৎসক-নার্সরা। আইসিইউ-ভেন্টিলেটরের তীব্র সংকট। ভেন্টিলেটর ও অন্যান্য মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য সরকার-প্রশাসনের কাছে কাকুকি-মিনতি করছেন চিকিৎসকরা।
প্রতি মিনিটে মিনিটে মরছে মানুষ। আক্রান্ত হয়ে আসছে আর লাশ হয়ে যাচ্ছে কেউ কেউ। চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় মরতে দেখে কাঁদছে ডাক্তার-নার্স। নিউইয়র্ক এখন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। হার মানাচ্ছে হরর সিনেমাকেও।
বিশ্বের রাজধানীখ্যাত নিউইয়র্কের করোনা পরিস্থিতিকে যুদ্ধাবস্থা বলে বর্ণনা করছেন মার্কিন চিকিৎসক-নার্সরা। রয়টার্স।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি করোনা রোগীর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এখন মহামারীর এপিসেন্টার তথা কেন্দ্রস্থল নিউইয়র্ক সিটি। ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে আগেই ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এখন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসা রোগীদের চিকিৎসা দিতে পারছে না।
হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভয়াবহ বিশৃঙ্খল অবস্থা। নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনে ব্রুকডেল হসপিটাল মেডিকেল সেন্টার নামের একটি হাসপাতালের ভেতরের পরিস্থিতির একটি ভিডিও ফুটেজ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
সেখানে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালের ভেতরে জায়গা না থাকায় মেঝের ওপরে শুয়ে কাতরাচ্ছে অসংখ্য রোগী। ৩৭০ শয্যার হাসপাতালটির সব শয্যাতেই রোগী। হাসপাতাল এলাকাকে ‘যুদ্ধ ময়দান’ বলে অভিহিত করছেন ডাক্তার-নার্সরাই।
অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে আইসিইউ ও কৃত্তিম শ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্র ভেন্টিলেটর। যেখানে দুই হাজার দরকার সেখানে আছে মাত্র দুইশ’ ভেন্টিলেটর। অতিরিক্ত রোগীদের সেবা দিতে নতুন করে আরও ভেন্টিলেটর ও মেডিকেল সরঞ্জামের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ডাক্তাররা। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকেও মেডিকেল সরঞ্জামের ঘাটতি বলে জানানো হয়েছে।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের একটি হাসপাতালের শিক্ষানবিশ নার্স ক্রিশ্চিয়ান ক্যালডেরন। আইসিইউ ইউনিটে রাতের শিফটে কাজ করেন তিনি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনার রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি জানান, করোনাবিরোধী এ লড়াইয়ে নিজেকে তার একজন যোদ্ধা বলে মনে হচ্ছে।
হাসপাতালের নিজের অফিসের সামনেও ‘ওয়ারিয়র’ তথা যোদ্ধা শব্দটি লিখে রেখেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ডের সামনেই যোদ্ধা শব্দটি লিখে রেখেছি। এ মুহূর্তে একটা যুদ্ধ পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা।’
তিনি জানান, হাসপাতালের সব চিকিৎসক-নার্স প্রতিদিন জরুরি যুদ্ধাবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনার রোগীদের বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি আমরা। তারপরও প্রতিদিনই কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে।’
হাসপাতালের স্টাফরা মরদেহ টানতে টানতে ক্লান্ত। প্রত্যেকটা হাসপাতালেই এখন লাশের স্তূপ। করোনায় সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। গত এক শতাব্দীতেও নিউইয়র্কের মানুষ এতটা কঠিন সময় পার করেনি। কারও পরিবারে বাবা মারা গেছে, কারও মা, কারও ভাই-বোন।
শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে পরিবারের অন্য মানুষেরা। বৃদ্ধ রোগী বেশি হলেও আছে শিশু রোগীও। এসব শিশু শুধু ফেলফেল করে তাকিয়ে দেখছে। কিছু বলতে পারছে না।
নিউইয়র্কে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬,০৪৯ জন। মারা গেছেন ১,২৫০ জন। প্রতি মুহূর্তেই এ সংখ্যা বাড়ছে। নিউইয়র্কে বারোরকম দেশের মানুষের বসবাস। শুধু গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুই শতাধিক।
Discussion about this post