আনিসুল হক। একটি ভালোবাসার নাম, একটি আবেগের নাম। তিনি ছিলেন জনতার নগরপিতা। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের মানুষের প্রিয়মুখ ছিলেন। আরও ছিলেন সফল উদ্যোক্তা এবং দর্শকপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপক।
আনিসুল হক জন্মেছিলেন ১৯৫২ সালে চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জে। নোয়াখালীর ছেলেটিই স্বপ্ন দেখেছিলেন রাজধানী ঢাকাকে বদলে দেওয়ার। ব্যবসায়ী থেকে হয়ে উঠেছিলেন ঢাকার নগরপিতা। কিন্তু সেইপথ বেশিদূর হাটতে পারেননি, ৬৫ বছর বয়সেই না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।
আজ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এই মেয়রের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবারে লন্ডনে যান তিনি। সেখানে সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিসে (মস্তিস্কের রক্তনালির প্রদাহ) আক্রান্ত হলে ১৩ আগস্ট তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে মারা যান জনপ্রিয় এ মেয়র।
দিনটিকে স্মরণ করে প্রয়াতের পরিবার, ডিএনসিসি ও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে আজ গুলশান আজাদ মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এ দোয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুরোধ করেছেন মরহুমের স্ত্রী রুবানা হক।
রাজনীতিতে কোনো দলে নাম না লেখানো আনিসুল হক ২০১৫ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ডিএনসিসির মেয়র নির্বাচিত হন। রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়ে তোলার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়ে আলোচিত ও প্রশংসিত হন তিনি। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালের সামনের সড়ক দখলমুক্ত করতে গিয়ে তিনি বিক্ষুব্ধ চালকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। পরে তার নেতৃত্বে ডিএনসিসি ওই সড়ক দখলমুক্ত করে। শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত রাস্তা ও বিভিন্ন এলাকার পার্ক দখলমুক্ত করা এবং শহরের পথচারীদের জন্য আধুনিক টয়লেট নির্মাণ করেন তিনি। গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় বিশেষ রঙের রিকশা এবং ‘ঢাকা চাকা’ নামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সেবা চালু করেন আনিসুল হক। বিমানবন্দর সড়কে যানজট কমাতে মহাখালী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে ইউলুপ করার উদ্যোগও তার।
আনিসুল হকের জন্ম নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ১৯৫২ সালে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। আশির দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ীও। ১৯৮৬ সালে তার নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘মোহাম্মদী গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিআইপিপিএরও সভাপতি ছিলেন।
সময়ের কণ্ঠস্বর
Discussion about this post