মোর পোলাপানে ব্যাবাক জাগাজমি লেইখ্যা নিয়ে মোরে রাস্তায় হালাইয়্যা থুইয়্যা গ্যাছে। মোরে খাওন-পরন দেয় না, মোরে মারে। মুই জাগা দেতে চাই নাই মোরে পোলারা মাইর্যাক জাগা ল্যইখ্যা লইয়্যা গ্যাছে। মাইঝ্যা পোলায় জাগা দিতে চাই নাই হেইয়্যার লইগ্যা মোরে মারছে। কাগোজে টিপ রাইখ্যা মোরে রাস্তায় থুইয়্যা গ্যাছে। সব পোলারা জাগা ল্যাইখ্যা নেছে এ্যাহোন মোরে কেউ জিগায় না। মুই এ্যাইয়্যার বিচার চাই।
কান্নাজনিতকণ্ঠে শনিবার দুপুরে হলদিয়া ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে বসে এ কথা বলেছেন আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের চন্দ্রা গ্রামের ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধ আবদুল গনি হাওলাদার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা চাওড়া ইউনিয়নের চন্দ্রা গ্রামের এক সময়ের ধনাঢ্য ব্যক্তি আবদুল গনি হাওলাদার। তার ছিল ২৫ একর জমি। দুই স্ত্রীর পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ে। বয়সের ভারে চোখে দেখেন না, কানে কম শোনেন ও ঠিকমত কথা বলতে পারেন না।
এ সুযোগে দুই স্ত্রীর পাঁচ ছেলে ইসমাইল, শাহজাহান, নুরুল হক, জামাল ও হেলাল বাবাকে ভালোবাসার অভিনয় করে যখন যেভাবে পেরেছে জমিজমা লিখে নিয়েছে। সম্প্রতি মেঝ ছেলে শাহজাহান হাওলাদার বাবাকে চিকিৎসা করানোর নাম করে তার আমতলী পৌরসভার বাসায় নিয়ে যায়। ওই বাসায় নিয়ে তার সমুদয় জমিজমা লিখে নেন। শনিবার সকালে শাহজাহান হাওলাদার ছেলে সোহেল রানা দাদাকে একটি গাড়িতে করে নিয়ে এসে উপজেলা হলদিয়া ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়।
ওইদিন দুপুরে পেটের ক্ষুধায় কাতরাতে দেখে স্থানীয় লোকজন তাকে একটি দোকান ঘরে বসিয়ে পাউরুটি খেতে দেয়। আট ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পাঁচ ছেলের কেউ তাকে নিতে আসেনি।
খবর পেয়ে আমতলী থানার ওসি মো. আবুল বাশার ও এসআই মহিউদ্দিন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ আসার খবর পেয়ে ছেলেরা গা-ঢাকা দিয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সাদা পাঞ্জাবি-টুপি পরিহিত বৃদ্ধ একটি দোকানে বসে আছেন। এক পাশে একটি পাউরুটি ও একটি মগে পানি। অন্য পাশে একটি ব্যাগে তার কাপড়-চোপড়। হাউমাউ করে কান্না করে বলতে থাকেন মোর জমিই মোর জন্য কাল হল। সব জমি ছেলেরা লিখে নিয়ে এখন কেউ খোঁজ নেয় না। এই বয়সে আমি কোথায় যাব। কেন মোর মরণ হয় না? ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। কাউকে দেখলে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন আর কাঁদেন।
হলদিয়া ব্রিজ সংলগ্ন গ্রামের চিকিৎসক রুহুল আমিন বলেন, শাহজাহানের ছেলে সোহেল রানা শনিবার সকালে তার দাদা বৃদ্ধ আবদুল গনি হাওলাদারকে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায়। ক্ষুধায় কাতরাতে দেখে আমরা রাস্তা থেকে তুলে একটি দোকানে বসিয়ে পাউরুটি খেতে দিয়েছি। দুপুর গড়িয়ে গেলেও কেউ তাকে নিতে আসেনি।
যুগান্তর
Discussion about this post