জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে তীব্র আসন সংকটের কারণে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গণরুমে থাকতে হয়। গণরুমে নবীনরা দিনের বেলায় নির্বিঘ্নে থাকলেও রাতে ভোগান্তির শেষ নেই ! প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে মধ্যরাত এমনকি ভোর রাত পর্যন্ত নবীনদের ওপর চলে সিনিয়রদের নিপীড়ন। রাতে নবীনদের জন্য গণরুম রূপ নেয় ‘টর্চার সেলে’
‘ম্যানার’ (আচার-আচরণ) শেখানো, ‘ইন্টিমিসি’ (সম্পর্ক) গড়া এবং পরিচিত হওয়ার নামে ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মীরা গণরুমে গিয়ে নবীনদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান। কখনো কখনো মাত্রাতিরিক্ত টর্চারে নবীন শিক্ষার্থীরা শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ার পাশাপাশি মাসনিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তবে গণরুমকে ‘টর্চার সেল’ বলতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও জাবি শাখা ছাত্রলীগ। বর্তমানে গণরুমে নির্যাতনের মাত্রা কমেছে বলে দাবি প্রশাসন ও ছাত্রলীগের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে ও মেয়েদের আটটি করে মোট ১৬টি আবাসিক হল রয়েছে। হলগুলোতে সব শিক্ষার্থীর আসন সংকুলান না হওয়ায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এক রুমেই ২০-১৫০ জনকে একত্রে থাকতে হয়।
গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের নানা কায়দার শাস্তি দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে, হাঁটুর নিচ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে কান ধরে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, মুরগি (বিশেষ ধরনের শারীরিক শাস্তি) হওয়া, দীর্ঘক্ষণ কান ধরে ও এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা, কান ধরে উঠ-বস করা, জানালার গ্রিল ও রড ধরে ঝুলে থাকা ইত্যাদি। এর সঙ্গে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ তো আছেই। এসব নির্যাতন অনেক সময় অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যায়। এতে শিক্ষার্থীদের মারাত্মকভাবে আহত হওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। মেয়েদের হলে নির্যাতনের ঘটনা কমে গেলেও ছেলেদের হলে এখনো চলমান।
ছাত্রদের হলে গণরুমে প্রত্যেক শিক্ষার্থী কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হন। পাঁচ বছরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থী হল ছেড়েছেন। কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ও ছেড়েছেন। ছাত্রীদের হলে নির্যাতনের মাত্রা কম। তবে নবীনদের নির্যাতনের দায়ে আজীবন বহিষ্কারের কালিমা লেগেছে ছাত্রীদের গায়ে।
ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে আবাসিক হলে র্যাংগিংয়ের অভিযোগকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ছাত্রলীগের কেউ গেস্টরুম বা গণরুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করে বলে মনে করি না। আর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে র্যাগিং নির্মূলে আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছি এবং করে যাব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, র্যাংগিং যেহেতু দীর্ঘদিনের অপসংস্কৃতি তাই এটি নির্মূল করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপ অনেকাংশে র্যাগিং কমাতে সক্ষম হয়েছে।
Discussion about this post