হকারের কাছ থেকে কেনা প্রাণ ফ্রুটিক্স জুস পান করে প্রাণ গেল মেধাবী ছাত্রী সুস্মিতা হোম চৌধুরী মন্টির। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের কদিম ডৌহাখলা গ্রামের সুবীর হোম চৌধুরী মেয়ে। ময়মনসিংহ ব্রিজ মোড় থেকে কেনা জুস খেয়ে প্রায় ১৫দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে বুধবার (২অক্টোবর) রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে। মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে নিন্দার ঝড়।
সুস্মিতার বাবা সুবীর হোম চৌধুরী বলেন, মেয়েটা প্রায় একমাস আগে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ ব্রিজে আসে। তখন দু’টো শিশু প্রাণের ফুটিক্স জুস কিনতে অনয়-বিনয় করে। সেদিন ছিলো প্রচন্ড রোদ তারপরও মন্টি সেটা তখন খায়নি। ব্যাগেই রেখে দেয়। এই জুসের বোতল নিয়ে আবারও ঢাকা, বোনের বাড়ি এবং আত্মীয়দের বাড়িতেও ঘুরে আসে। ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা যাবে তাই ১৬ তারিখ রাত ১০টার দিকে ব্যাগ গোছাতে গিয়ে সেই জুসের বোতল দেখতে পায়। সেই জুসেই কেড়ে নিলো তাঁর মেয়ের জীবন।
সুস্মিতার মা প্রীতি হোম চৌধুরী জানান, ওই রাতে মন্টি কিছুই খেতে চায়নি। শুধু এক গ্যাস দুধ খেয়েছিলো। এরপর দুই ঘন্টার পর কাপড় গোছাতে গিয়ে ব্যাগের ভিতরে জুস পেয়ে একাই খায়। খাওয়ার এক সেকেন্ডের মাঝেই বিছানায় লুটিয়ে পড়ে মন্টি। আমরা ভেবেছিলাম ঘুমিয়ে পড়েছিলো। পরদিন সকালে আর তার ঘুম ভাঙে না। জোর করে তার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ঘুম ভাঙছেই না। শোয়া থেকে বিছানায় বসানো হলেও তিনি আর মাথা তুলতে পারেননি।
ডাক্তার নিয়ে আসা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা চলে। তার জ্ঞান ফিরে পরের দিন বিকাল ৪টায়, প্রায় ১৭ঘন্টা অচেতন ছিলো। তবে অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রাণের ফুটিক্স জুসের খালি বোতলে সাদা দানাদার কিছু রয়েছে। ব্রিজেই তাকে অচেতন করে মালামাল লুট করার জন্য অজ্ঞান পার্টি চক্রের কাজ এটা। ওরাই দুটো শিশুকে দিয়ে মানবিক আবেদন করে জুসটা বিক্রি করে। মন্টি কিনলেও সেটা খায়নি। হয়তো সেখানে খেলে এতোটা বিষক্রিয়া হতো না।
দীর্ঘদিন জুসের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ থাকায় এটার বিষক্রিয়া মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। সেটা খাওয়ার কারণেই তার গলা, খাদ্যনালী ও লিভারে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পরে কিডনীও ড্যামেজ হয়ে যায়।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রবিউল ইসলাম ছাড়পত্রে উল্লেখ করেন ১৩দিন পূর্বে রাস্তার কোমলপানীয় পানে তাঁর শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ কারণে তার শরীরের কিডনী, লিভারসহ একাধিক অঙ্গ অচল হয়ে যায়।
সুস্মিতার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হওয়ায় ২ অক্টোবর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঢাকায় নেয়ার পথে ত্রিশাল এলাকায় যাওয়ার পর সুস্মিতা হোম চৌধুরী মন্টি মারা যায়। মন্টির বাবা সুবীর হোম জানান, প্রানের ফ্রুটিক্স নামের এক জুসের সঙ্গে অচেতন জাতীয় ওষুধ মিশানো থাকায় তা খাওয়ার পর গলা ও শ্বাসনালীতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এ কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ডাক্তার তাকে নিশ্চিত করেন।
সুস্মিতা ২০০৭সালে ডৌহাখলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি, ২০০৯সালে গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসিতেও ছিলো জিপিএ-৫ পায়। ময়মনসিংহ মুমিনুন্নেসা মহিলা কলেজ থেকে গণিতে অনার্স ও মাস্টার্সেও প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়।
Discussion about this post