১১ বছরের ছেলেকে রেখে স্বামী মারা যান। নিজের মা-বাবাও বেঁচে নেই। এমন অবস্থায় সন্তান নিয়ে দিনমজুর ভাইয়ের সংসারে থাকাটা বোঝা বাড়ানো ছাড়া আর কি! সেটা বুঝেছিলেন মুন্সিগঞ্জ সদরের জহুরা বেগম (৩২)। সে কারণেই নিজের একমাত্র সন্তানকে একটু ভালোভাবে মানুষ করার আশায় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে যান তিনি।
কিন্তু মাত্র তিন মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ১৩ মে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে সৌদি আরব থেকে খবর আসে। নিজের একমাত্র সন্তানকে দেশে রেখে কেন এ পথ বেছে নিলেন জোহরা? সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তবে বোনের সন্তান যেন শেষবার মায়ের মুখ দেখতে পারে তাই জোহরার মরদেহ ফেরাতে মাসের পর মাস বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন শামীম মিয়া। তার চেষ্টায় মৃত্যুর ৯ মাস পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জহুরার লাশ আসে দেশে।
শুধু জহুরা নয়, চলতি বছর ১৭ জন বাংলাদেশি নারীর লাশ এসেছে; যারা বিদেশে কাজ করতে গিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। যারা ছিলেন দেশের রেমিটেন্স সৈনিক, একটু ভালো থাকার আশায় গিয়েছিলেন বিদেশে। গত কয়েক বছরে বিদেশে নারীকর্মীদের মৃত্যুর হার যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে আত্মহত্যার সংখ্যাও। ২০১৬ সাল থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত এ সংখ্যা ৫৩ জন।
বিষয়টি উদ্বেগজনক বলছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা। তবে প্রবাসীদের দেখভাল বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে প্রবাসী নারীকর্মীদের আত্মহত্যা বাড়ছে বলে তেমন কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। যদিও তিন বছরের যে সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে সেটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের হিসাব।
তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ৬০ নারী গৃহকর্মীর মরদেহ দেশে আসে। এদের মধ্যে ১৭ জন আত্মহত্যা করেন, ২০ জন স্ট্রোকে, দুর্ঘটনায় ১০ জন, স্বাভাবিকভাবে ৫ জন এবং অন্যান্য কারণে ৮ জনের মৃত্যু হয়। বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে মাত্র একজন নারীকর্মীর আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করা হয়। এরপর ২০১৭ সালে তা বেড়ে ১২ জন, ২০১৮ সালে ২৩ জনে দাঁড়ায়।
দরিদ্র পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষের মৃত্যু তাদের জন্য নতুন বিভীষিকা নিয়ে হাজির হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, তারা আত্মহত্যা করেননি, বরং তাদের হত্যা করে আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
Discussion about this post