প্রবল গণআন্দোলনের মুখে এক বছর আগে আজকের এই দিনে শেখ হাসিনার সুদীর্ঘ কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটে। ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন পরিচিতি পেয়েছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ নামে। তারই প্রথম বার্ষিকী ‘৩৬ জুলাই’ আজ মঙ্গলবার। বাঙালি জাতির জন্য স্মরণীয় একটি দিন। টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গত বছরের ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, যে গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন থেকে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সামরিক বিমানে করে দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন কর্তৃত্ববাদী শাসক শেখ হাসিনা। আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদের রাজনীতিতে শুরু হয় নতুন এক বাঁকবদলের।
সংবাদ সংস্থা এএফপি তখন জানিয়েছিল, শেখ হাসিনা তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে গণভবন থেকে নিরাপদে বাংলাদেশ ছেড়েছেন। দেশ ছাড়ার আগে জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন তিনি; কিন্তু সেই সুযোগ না হওয়ায় আগেই দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন ৫ আগস্টকে আজ ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করবে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সরকারি গেজেট অনুযায়ী, গণঅভ্যুত্থানে শহীদের সংখ্যা ৮৩৬। এর মধ্যে বিএনপির অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ৪২২ জন শহীদ হন বলে দাবি দলটির।লাখো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, আইনজীবী, সুশীল সমাজের সদস্য ও রাজনৈতিক কর্মীরা ‘দ্রোহযাত্রা’-তে যোগ দেয়। ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনকারীদের ডাকে সর্বস্তরের মানুষ জড়ো হলে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বতঃস্ফূর্ত এক অভ্যুত্থান থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে একদফা ঘোষণা করেন। হাজারও জনতা সমস্বরে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিকে সমর্থন করেন এক আঙুল দেখিয়ে। এমন অবস্থায় শেখ হাসিনা বিক্ষোভকারীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানালেও আন্দোলনকারীরা সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়।
এর মধ্যে সরকারের পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনার রূপরেখা দেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এদিকে সমন্বয়করাও চাইছিলেন আন্দোলনকে দ্রুত পূর্ণতা দিতে। তাই শুরুতে ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির আহ্বান জানানো হলেও পরে তা একদিন এগিয়ে ৫ আগস্ট করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকাতে সরকারও পদক্ষেপ নেয়। তবে বেলা ১১টার পর থেকে ঢাকার পথে ঢল নামে মানুষের। কারফিউ উপেক্ষা করে বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। এমন অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর পদত্যাগ করতে রাজি হন শেখ হাসিনা। তিনি ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছাড়েন। দীর্ঘদিন পর শেখ হাসিনার পতন উদযাপন করতে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। গণভবন, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন তারা।
ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা আজ: গণঅভ্যুত্থান দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনে আজ দেশের প্রতিটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে মোনাজাত ও প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল এক তথ্য বিবরণীতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এ কথা জানায়। এ ছাড়া রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে আজ ‘যাত্রাবাড়িতে গণহত্যা’ শীর্ষক জুলাই-২৪ পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ।
Discussion about this post