ডিপি ওয়ার্ল্ড (DP World) একটি আন্তর্জাতিক বন্দর ও পরিবহন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, যার সদর দফতর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং প্রতিবছর প্রায় ৭০ মিলিয়ন কনটেইনার (TEU) হ্যান্ডল করে। বিশ্বজুড়ে এদের প্রায় ৫০,০০০-এর বেশি কর্মী নিয়োজিত রয়েছে।
ডিপি ওয়ার্ল্ডের বৈশ্বিক সফলতা
-
১২০টির বেশি ব্যবসায়িক ইউনিট পরিচালিত হচ্ছে আফ্রিকা, ইউরোপ, এশিয়া ও আমেরিকায়।
-
সমুদ্রবন্দর, খাল, ড্রাই বন্দর, রেল পরিবহন ও আধুনিক গুদাম ব্যবস্থাপনায় বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়।
-
কোটি কোটি ডলারের বৈশ্বিক বাণিজ্য সহজতর করছে তাদের প্রযুক্তিনির্ভর লজিস্টিক সেবা।
ডিপি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের বাণিজ্য ও লজিস্টিক খাতে বড় পরিবর্তন আনার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে আধুনিক বন্দর ব্যবস্থাপনা, কাস্টমস প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, এবং দ্রুত মাল পরিবহন নিশ্চিত করার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
বিনিয়োগ ও চুক্তির বিবরণ
-
২০২১ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ সরকার ও ডিপি ওয়ার্ল্ড-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হয়।
-
এই চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম বন্দরের বাইরে এবং ঢাকার নিকটবর্তী স্থানে আধুনিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং সুবিধা গড়ে তোলা হবে।
-
প্রস্তাবিত প্রকল্পে বহু কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা পিপিপি (Public-Private Partnership) মডেলে বাস্তবায়ন হবে।
ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (ICD) প্রকল্প
-
ICD হচ্ছে একটি বিশেষ কনটেইনার টার্মিনাল, যা সমুদ্রবন্দর থেকে দূরে স্থাপিত হয় এবং পণ্য হ্যান্ডলিং ও কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
-
ডিপি ওয়ার্ল্ড নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুর এলাকায় ICD নির্মাণের কথা ভাবছে, যেখানে ঢাকার আমদানি-রপ্তানিকারকরা বন্দরের ভিড় এড়িয়ে সহজে পণ্য নিতে পারবেন।
-
এটি চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমাবে, এবং দেশের পরিবহন খরচ ও সময় অনেকটাই কমিয়ে আনবে।
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ও সুবিধাভোগীদের অভিমত
-
বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা মনে করছেন, ডিপি ওয়ার্ল্ডের প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক মানের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে রপ্তানি বান্ধব লজিস্টিকস ব্যবস্থায় রূপান্তর করবে।
-
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতারা ICD প্রকল্পকে স্বাগত জানালেও বন্দরের নিয়ন্ত্রণ বা বেসরকারিকরণ নিয়ে কিছু উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
-
সরকারি পর্যায়ে এটিকে একটি “কৌশলগত উন্নয়ন” হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় মালিকানা বজায় রেখে বৈশ্বিক মানের সেবা গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
শেষ কথা
ডিপি ওয়ার্ল্ডের বিনিয়োগ শুধু একটি বন্দর উন্নয়ন নয়—এটি একটি লজিস্টিক বিপ্লবের শুরু। বাংলাদেশ যদি এই সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারে, তবে তা দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার পথে বড় সহায়ক হবে।
Discussion about this post