ভারতের নিরাপত্তা মহলে নতুন করে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সীমান্ত নিয়ে। সম্প্রতি পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার রেশ না কাটতেই, ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও পাকিস্তান—সঙ্গে সীমান্ত সংক্রান্ত উত্তেজনা আরও জটিল আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সরকারের সূত্রের বরাতে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ভারত সরকার বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-এ ১৬টি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ১৭,০০০ এর বেশি নতুন সদস্য নিয়োগ দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হলো ভারত-বাংলাদেশ এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও জোরদার করা।
সূত্রমতে, বিএসএফের যেসব অংশ বর্তমানে সীমান্তে কাজ করছে, তারা একাধিক দায়িত্ব পালনের কারণে ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছে। নতুন ব্যাটালিয়নগুলো গঠন করা হলে সীমান্ত পাহারায় নিযুক্ত বাহিনীর উপর চাপ কমবে এবং তারা আরও দক্ষতার সঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষা করতে পারবে।
এছাড়া ভারত সরকার দুটি নতুন সেক্টরাল হেডকোয়ার্টার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি জম্মুতে, যা পাকিস্তান সীমান্তে নজরদারির কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। অপরটি মিজোরামে, যা বাংলাদেশ সীমান্ত ঘিরে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে গুরুত্ব দেবে। এই অফিসগুলোর মাধ্যমে সাইবার গোয়েন্দা কার্যক্রম, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর ওপর নজরদারি, ড্রোন চিহ্নিতকরণ ও মাদকপাচার রোধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানা গেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম পিটিআই জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ঘটনায় ভারত উদ্বিগ্ন। যেমন, বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব ও আস্থার ঘাটতি। পাকিস্তান সীমান্তে ঘনঘন সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ। পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানি সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা ও সীমান্ত অঞ্চলে মাদক ও অস্ত্র পাচারের ঘটনা বেড়ে যাওয়া।
এছাড়া সম্প্রতি পাকিস্তানি হ্যাকারদের দ্বারা ভারতীয় প্রতিরক্ষা ওয়েবসাইট হ্যাক হওয়ার ঘটনাও ভারতকে আরও সতর্ক হতে বাধ্য করেছে।
বর্তমানে বিএসএফের পূর্বাঞ্চলে—আসামের শিলচর, মিজোরামের আইজল ও মণিপুরে তিনটি প্রধান শাখা রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলে জম্মুতে রয়েছে চারটি শাখা, যেগুলো মূলত পাকিস্তান সীমান্তে সক্রিয়। নতুন ব্যাটালিয়ন এবং অফিস স্থাপনের মাধ্যমে সীমান্তে সন্ত্রাস, চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও গোয়েন্দা তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যাশা করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্ত কেবল অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে নয়, এটি একটি কূটনৈতিক বার্তা হিসেবেও কাজ করছে। সীমান্তে আরও কড়াকড়ি আরোপের মধ্য দিয়ে ভারত হয়তো বাংলাদেশ ও পাকিস্তান—উভয় দেশের দিকেই সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছে।
Discussion about this post