দেশের স্বার্থে ড. ইউনুস সরকার ও বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি-এবি পার্টি-গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিভিন্ন ইসলামী দলসহ গণঅভ্যুত্থানের সকল রাজনৈতিক পক্ষের ঐকমত্য জরুরী বলে মনে করেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। ঐকমত্যের ভিত্তিতে ফ্যাসিবাদের বিচার, রাষ্ট্রীয় সংস্কার, আইন শৃঙ্খলার উন্নতি ও একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে না পারলে জুলাই অভ্যুত্থানের স্বপ্ন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে বলে আশংকা ব্যক্ত করেন তিনি। আজ নিজ জেলা ফেনীতে এবি পার্টির নতুন কার্যালয় উদ্বোধন, রাজনৈতিক কর্মশালা, নাগরিক সভা ও গণসংযোগ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন দলের প্রধান জনাব মঞ্জু ।
শনিবার সকালে ফেনী সদর উপজেলাস্থ শর্শদি ইউনিয়নে স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে গণসংযোগ করেন তিনি, এসময় একটি উঠান বৈঠকেও বক্তব্য রাখেন এ নেতা। বিকেল ৩ টায় ফেনী শহরের মিজান রোডে দলের নতুন কার্যালয় উদ্বোধন এবং দলের নেতা কর্মীদের এক রাজনৈতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মজিবুর রহমান মঞ্জু ছাড়াও দলের ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী শাহ আলম বাদল উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যা ৭ টায় শহরের একটি রয়েল সেলমন রেষ্টুরেন্টে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রত্যাশা, প্রেক্ষাপট ও সংস্কারের তরঙ্গে বদলে যেতে উন্মুখ ‘ফেনী’ শীর্ষক এক নাগরিক সভা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। ফেনী জেলা এবি পার্টির সদস্যসচিব প্রভাষক ফজলুল হকের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা আহ্বায়ক মাস্টার আহসান উল্লাহ।
নাগরিক সভায় মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন; জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যারা জনগণের অধিকার কেড়ে নেয় জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে তারা একসময় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। আজ ফেনীসহ দেশের প্রায় সকল জেলার বড় বড় আওয়ামী লীগ নেতারা সবাই আত্মগোপনে চলে গেছেন। পাড়ায় মহল্লায় আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা আছেন তাদের মাথা হেট হয়ে আছে, অথচ কিছুদিন আগেও তাদের দাপটে মানুষ কথা বলতে পারেনি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বার বার ভুল করে এবং ক্ষমা চায়, কিন্তু সুযোগ পেলেই তারা আবার বাকশাল ও ফ্যাসিবাদ কায়েম করে। ফেনীতে বিএনপি-জামায়াত, হেফাজত ও এবি পার্টিসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের উপর নির্মম নির্যাতনের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে যে কোন সময় পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আমরা বিশৃঙ্খলা চাই না, আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত বিচার ও খুনি লুটেরাদের শাস্তি। সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভেদকে খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে ড. ইউনুস সরকার ও বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি-এবি পার্টি-গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিভিন্ন ইসলামী দলসহ গণঅভ্যুত্থানের সকল রাজনৈতিক পক্ষের ঐকমত্য জরুরী।
ফেনীতে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও চীনের অর্থায়নে আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দল মত নির্বিশেষে এটা ফেনীর জনগণের প্রাণের দাবি। এর জন্য ফেনীর সকল মানুষ একদিন একযোগে প্রতীকী অনশন পালনের কর্মসূচি রাখার প্রস্তাব দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে দলের ভাইস চেয়ারম্যান লে: কর্ণেল মো: দিদারুল আলম, পিএসসি (অব:) বলেন, আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারণে ফেনী যেমনি আলোচিত, তেমনি ফেনীর জনগণকে এ কারণে গত ১৫ বছর বহু বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। এবার সকল বঞ্চনার জবাব দিতে হবে এই রাষ্ট্রকে। ফেনীর জন মানুষের উচিত হবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ দাবি তোলা যে, উন্নয়নে ফেনী যেন সবচেয়ে বেশী অগ্রাধিকার পায়। তিনি মজিবুর রহমান মঞ্জু’র নেতৃত্বে ফেনীর উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করার জন্য সকলকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথি প্রকৌশলী শাহ আলম বাদল বলেন, এবি পার্টিকে ফেনীতে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। আমাদেরকে ইফতার মাহফিল সহ কোন সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আমরা ধৈর্য্য ধারণ করেছি। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি নিয়ে অনড় মনোবলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলাম। ফলে আজকে বাধাাদানকারীরাই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। আগামীতে ফেনীর প্রত্যেক ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দলের শক্ত সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তোলা হবে মর্মে তিনি ঘোষনা দেন। মতবিনিময় সভায় ফেনী-২ আসনের ১২টি ইউনিয়নের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ অংশ নেন। তারা নিজ নিজ এলাকার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে নানা মতামত তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এসময় ফেনীর বিভিন্ন উপজেলা থেকে ৩০ জনেরও অধিক লোক এবিপার্টির চেয়ারম্যানের হাতে ফুল দিয়ে দলে যোগদান করেন। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টি ফেনী জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক জনাব আফলাতুল বাকী ফেনী, যুগ্ম আহবায়ক মোতাহের হোসেন বাহার, যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন আনসারি, নজরুল ইসলাম কামরুল, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত সাজু, কোষাধক্ষ্য শাহ আলম শাহীন সুলতানী, প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক হাবীব উল্যাহ মিয়াজী, সমাজসেবা সম্পাদক এবি সিদ্দিক, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও ফেনী পৌর সদস্য সচিব অধ্যাপক রিজওয়ানুল খায়ের, সহ দপ্তর সম্পাদক নাজরানা হাফিজ অমলান, নারী বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা আক্তার মনি, সহ নারী বিষয়ক সম্পাদক শানু, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাওলা আব্দুল হাফিজ খন্দকার, সদস্য প্রভাষক মোজাম্মেল হোসেন, কাজী জাহাঙ্গীর আলম, ফখরুল ইসলাম মুরাদ, ফেনী সদর উপজেলা সদস্য সচিব আবু সাইদ, যুগ্ম সদস্য সচিব হাফেজ কামরুল, সোনাগাজী উপজেলা শাখার আহবায়ক রহমত উল্লাহ মিজান, সদস্য সচিব ওয়াসিউর রহমান খসরু ছাগলনাইয়া উপজেলা শাখার সমন্বয়ক নাফিজ ইমতিয়াজ শিমুল, সহ সমন্বয়ক শরীফুল ইসলাম লিংকন, বি যুব পার্টির আহ্বায়ক শফিউল্লা পারভেজ, সদস্য সচিব এসএম ইব্রাহিম সোহাগ প্রমুখ, এ ছাডাও নাগরিক সভা ও মতবিনিময়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ইসলামী আন্দোলন, গন অধিকার পরিষদ, হেফাজতে ইসলাম,যুব আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি, জনতার অধিকার, ইমাম সমিতির নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ফেনীর বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post