স্বপ্ন ছিল একটু ভালো থাকার, পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর। বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ সেই স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমায় মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, ইউরোপ কিংবা আমেরিকার দিকে। কিন্তু সেখানে পৌঁছে, অনেকেই ধাক্কা খান বাস্তবতার দেয়ালে; শুরু হয় ওয়ার্ক পারমিট জটিলতা, অবৈধ হয়ে পড়ার শঙ্কা, আর দিনশেষে আইনি সংকটে জড়িয়ে পড়া।
মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে, অনেকেই রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে চাকরির প্রলোভনে পড়ে যান। চড়া দামে ভিসা কেনা, এজেন্টের মিথ্যা আশ্বাস, বা স্পন্সর কোম্পানির প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার কারণে প্রবাসীরা পড়ে যান অনিশ্চয়তার মধ্যে। কাজের অনুমতি (ওয়ার্ক পারমিট) পেতে দেরি, অথবা কিছুদিন পর কোম্পানি বাতিল করে দেয় চুক্তি, ফলে শ্রমিকটি ‘অবৈধ’ হয়ে যান স্বয়ংক্রিয়ভাবে।
একবার বৈধতার মেয়াদ শেষ হলে শুরু হয় ভয় আর আতঙ্কের জীবন। প্রতিদিন পুলিশের ধরপাকড়, ডিপোর্টেশনের ভয়, আর চাকরি হারানোর আশঙ্কায় কাটে দিনরাত্রি। কোনো আইনি সহায়তা পাওয়া দুরূহ, কারণ সে নিজেই তখন ‘আইনবহির্ভূত’। অনেকে বাধ্য হয়ে অমানবিক কাজের পরিবেশে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যান, কম পারিশ্রমিকে কাজ করেন, কিংবা মানবেতর জীবনযাপন করেন।
মালয়েশিয়ার মতো দেশে ‘মাইআইডি’, ‘বায়োমেট্রিক’ বা বিভিন্ন অ্যামনেস্টি প্রোগ্রামের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও, সব প্রবাসী এর সুযোগ পান না। আবার অনেক সময় ঘুষ বা দালাল চক্রের কারণে প্রক্রিয়াটি হয়ে পড়ে ব্যয়বহুল ও দুর্বোধ্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশে কফিল প্রথার কারণে শ্রমিকদের স্বাধীনতা হরণ হয়; স্পন্সরের অনুমতি ছাড়া চাকরি বদলানোও দণ্ডনীয়।
এই সংকট শুধু প্রবাসীর একার নয়, এর প্রভাব পড়ে তার পরিবারের ওপরও। দেশে থাকা মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানকে মাস শেষে টাকা পাঠানো অসম্ভব হয়ে পড়ে, তাদের জীবনও জড়িয়ে যায় অস্থিরতায়। তবে কিছু দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস কিছুটা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে; কনস্যুলার সেবা, ট্রাভেল পাস, ও আইনগত সহায়তা দিচ্ছে কিছুসংখ্যক প্রবাসীকে। তবুও সবার কাছে এই সেবা পৌঁছায় না।
প্রয়োজন একটি সমন্বিত উদ্যোগ; সরকারি নজরদারি, রিক্রুটিং এজেন্সির নিয়ন্ত্রণ, বিদেশে প্রবাসীবান্ধব নীতি, এবং প্রবাসীদের সচেতনতা। ওয়ার্ক পারমিটের জটিলতা দূর না হলে, হাজারো শ্রমিকের স্বপ্ন এইভাবেই ঝরে যাবে অন্ধকারে।
মির্জা হাসান মাহমুদ
Discussion about this post