নির্মম ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে নিহত কিশোরী ফেলানী খাতুনের কবর জিয়ারত করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে তিনি ফেলানীর গ্রামের বাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের দক্ষিণ রামখানা গ্রামে যান। সেখানে তিনি ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম নুরুকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জানা গেছে, কবর জিয়ারতের পর ডা: শফিকুর রহমান ফেলানীর বাবা-মা এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটান। পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি আর্থিক সহায়তা এবং নতুন জামা-কাপড় উপহার দেন। এ সময় তিনি ফেলানীর পরিবারের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘সীমান্তে ফেলানী হত্যার ১৪ বছর পার হয়ে গেলেও এখনো ন্যায়বিচার হয়নি। এটি শুধু ফেলানীর পরিবারের নয়, বরং পুরো জাতির জন্য এক অবর্ণনীয় বেদনার বিষয়। আমরা দাবি জানাই, ফেলানী হত্যার বিচার দ্রুত কার্যকর হোক এবং এটি আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করা হোক। সীমান্তে এমন নির্মমতা যেন আর কোনো শিশু বা কিশোরীর সাথে না ঘটে, সেই সচেতনতা আমাদের জাগ্রত রাখতে হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় ১৫ বছর বয়সী ফেলানী খাতুন। তার নিথর দেহ কাঁটাতারের বেড়ায় সাড়ে চার ঘণ্টা ঝুলে ছিল, যা বিশ্বজুড়ে মানবতার বিবেককে নাড়া দেয়। এত বছর পরও ভারতের সুপ্রিম কোর্টে থাকা মামলাটি নিষ্পত্তি হয়নি।
ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম নুরু বলেন, ‘আমার মেয়ের নির্মম মৃত্যু আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ। আমরা ন্যায়বিচারের আশায় গত ১৪ বছর ধরে অপেক্ষা করছি, কিন্তু এখনো তা পাইনি। আমার একমাত্র আকাঙ্ক্ষা, মেয়ের হত্যার সুবিচার যেন একদিন পাই।’
এ সময় ডা: শফিকুর রহমানের সাথে জামায়াতের কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় এবং স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং তাদের কল্যাণে পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এর আগে শুক্রবার সকালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
ফেলানীর হত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে এই প্রত্যাশায় মানবতার প্রতি দায়িত্বশীল এক সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
Discussion about this post