রেমিট্যান্স সংগ্রহের ক্ষেত্রে ডলারের দর সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা দেওয়া যাবে। বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে আনুষ্ঠানিকভাবে ডলারের দরে এই সীমা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে আনুষ্ঠানিক দর ১২০ টাকা ছিল বলে জানা যায়।
আন্তঃমুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে গণনা করা হার এই সীমা ছাড়াতে পারবে না বলে গতকাল নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হোসনে আরা শিখা। বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এটিসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূলত ডলারের চাহিদা বাড়ার কারণেই এই অস্থিরতা দেখা দেয়। ডলারের দর বাড়ার প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করে সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
রেমিট্যান্স সংগ্রহে বিনিময় হারের সীমা আরোপ করা ছাড়াও, বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ঘনিষ্ঠভাবে তদারকি করতে একটি ড্যাশবোর্ড বাস্তবায়ন করবে। এটি বিনিময় দরের আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ বাড়াবে। ডলারের দামে সম্প্রতি অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর পেছনে বেশকিছু কারণ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এর একটি বড় কারণ হলো অর্থবছর শেষে ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়া। ডিসেম্বরে প্রায়ই ঋণ পরিশোধ এবং অন্যান্য আর্থিক বাধ্যবাধকতা বেড়ে যায়, যা বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। আইএমএফ’র নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক ডলার বিক্রির স্থগিতাদেশ এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তঃব্যাংক বাজারে ডলারের সরবরাহ সীমিত হয়েছে। এতেই চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান আরও বেড়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিংয়ের অবনমন হওয়ায় বিদেশি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশে ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। যা ইউপিএএস (ইউসেন্স পেয়েবল অ্যাট সাইট) ঋণপত্র জারি করা, পেমেন্টের ম্যাচিউরিটি স্থগিত করা এবং বিদেশি ব্যাংক ঋণ প্রবাহকে বজায় রাখা আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। আরেকটি অন্যতম কারণ হলো-রেমিট্যান্স আহরণে অ্যাগ্রিগেটরদের একচেটিয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীদের ভূমিকা, যা বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারকে অস্থিতিশীল করেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় ডলার আসার প্রবাহ ও সে তুলনায় বহিঃপ্রবাহে অসামঞ্জস্যতা দেখা যাচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। ২০২৪ সালে ডলারের আনুষ্ঠানিক দর ৯ শতাংশ বেড়ে যাওয়া এবং বছরের শেষ পাঁচ মাসে অর্থ পাচার কমে যাওয়ায় প্রায় চলতি বছর বাংলাদেশ প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে বৈধ বা আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬.৬৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালের পুরো বছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাগ্রহনের পরে ডলারের বিনিময় দর বেড়ে ১২০ টাকা হয়। ডিসেম্বরে এসে তা ১২৮ টাকায় পৌঁছায়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুরুতে মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে সর্বোচ্চ ১২৩ টাকায় রেমিট্যান্সের ডলার কিনতে বলে।
Discussion about this post