নতুন কারিকুলামে মাধ্যমিক পর্যায়ের অন্যান্য সাবজেক্টের সাথে অতিরিক্ত সাবজেক্ট হিসেবে যুক্ত হচ্ছে আরবি। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে নবম/দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঁচ শ্রেণীতেই নতুন করে আরবি সাবজেক্ট অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। আর উচ্চমাধ্যমিকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে চারজন লেখকের লেখা বা প্রবন্ধ বাতিল করা হচ্ছে। এ ছাড়া তিনজন লেখকের কবিতা ও গল্প পরিবর্তন করা হচ্ছে। একই সাথে পাঁচজন লেখকের কবিতা ও প্রবন্ধের অনুশীলনীতে সম্পাদনা বা পরিমার্জন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাদ পড়া লেখকের তালিকায় শেখ মুজিবুর রহমান ও জাফর ইকবালও রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে নতুন ক্লাসে উঠে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা নতুন যে বই হাতে পাবে সেখানে ১২টি সাবজেক্টের সাথে ১৩ নম্বর সাবজেক্ট হিসেবে আরবিও যুক্ত হচ্ছে। ২০১২ সালের কারিকুলামের সাবজেক্ট হিসেবে এই আরবি এখন পুনরায় মাধ্যমিকের কারিকুলামে যুক্ত হচ্ছে। আর লেখক হিসেবে চারজনের লেখা বা প্রবন্ধ উচ্চমাধ্যমিকের কারিকুলাম থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্টের পর দেশের ছাত্রজনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের বিতর্কিত কারিকুলাম বাতিল করে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর থেকেই বিতর্কিত কারিকুলাম বাতিলের জন্য তীব্র গণদাবি তৈরি হয়। ফলে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকেই পুরনো কারিকুলামে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুরনো কারিকুলাম বাতিল এবং নতুন কারিকুলামে পাঠ্যবই মুদ্রণের সব ধরনের প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে এনসিটিবি।
সূত্র জানায়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণীর পাঠ্যসূচির বিভিন্ন সাবজেক্টের সাথে সব শ্রেণীতেই আরবি বিষয়টি যুক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণীতে ২০১২ সালের কারিকুলামের আনন্দ পাঠ নামে দ্রত পাঠ (বাংলা রেপিড) যুক্ত করা হচ্ছে। সব শ্রেণীতের ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের বাইরে অতিরিক্তি হিসেবে আরবি বিষয়টি যুক্ত করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত কারিকুলাম সম্পর্কিত কমিটি গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের রিভিউকৃত পাঠ্যপুস্তকগুলোর এই তালিকা অনুমোদন দিয়েছে।
অবশ্য ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের কারিকুলামে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন আনা হচ্ছে একাদশ/দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা সাহিত্য পাঠের সঙ্কলনে। এখানে মোট ২৮টি গদ্য এবং ২৮টি পদ্য রয়েছে। এখান থেকেই বাছাই করা গল্প ও কবিতা নিয়ে সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু এ বছর এই সিলেবাসের গল্প-কবিতা বাছাইয়েও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এর মধ্যে তিনজন লেখকের রচনা পরিবর্তন করা হচ্ছে। পাঁচটি রচনার অনুশীলনীতে পরিমার্জন আনা হচ্ছে। আর চারজন লেখকের লেখা বা রচনা পুরোপুরি বাদই দেয়া হচ্ছে। সূত্র মতে, তিনজন লেখকের লেখা বা রচনা পরিবর্তনের তালিকায় রয়েছে প্রমথ চৌধুরীর বর্ষা প্রবন্ধের পরিবর্তন করে সেখানে যুক্ত হচ্ছে সাহিত্যের খেলা, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের গৃহ পরিবর্তন করে যুক্ত করা হচ্ছে অর্ধাঙ্গী, কাজী নজরুল ইসলামের আমার পথ পরিবর্তন করে যুক্ত করা হচ্ছে যৌবনের গান। অপর দিকে বাদ পড়া লেখক ও তাদের রচনার তালিকায় রয়েছে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সঙ্কলন রায়ান্নর দিনগুলো, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও তার লেখা মহাজাগতিক কিউরেটর, দিলওয়ার ও তার লেখা মানুষ সকল সত্য এবং মহাদেব সাহা ও তার লেখা শান্তির গান। আবার পাঁচজন লেখকের তাদের লেখার অনুশীলনীর সম্পাদনা করারও প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শওকত আলীর কপিলদাস মুর্মুর শেষ কাজ, কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী ও সাম্যবাদী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর আমি কিংবদন্তির কথা বলছি এবং সৈয়দ শামসুল হকের নুরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়।
কারিকুলামের এই পরিবর্তনের বিষয়ে গতকাল রোববার বিকেলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ বি এম রিয়াজুল হাসান নয়া দিগন্তকে জানান, বিতর্কিত কারিকুলাম বাতিল করে এখন পুরনো ২০১২ সালের কারিকুলামে ফিরে গেলেও সেখানে প্রয়োজন এবং বাস্তবতার তাগিদেই বেশি কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, এক বছরের মধ্যেই হয়তো সব পরিবর্তন একসাথে আনা সম্ভব হবে না। কেননা এটা একটি নিয়মিত প্রসেজে এগোতে হয়। আমরা সেই চেষ্টাতেই এগিয়ে যাচ্ছি।
Discussion about this post