গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে তীব্র মানসিক স্বাস্থ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, প্রায় ৫,২০০ সেনা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মোট ১২,০০০ সেনা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক সমস্যা ভুগছেন।
এদিকে গাজা যুদ্ধে দানিয়েল নামে একজন সেনা, যিনি প্রথম দিকে যুদ্ধের উত্তেজনা ও সাহসিকতা অনুভব করেছিলেন। এখন তিনি গভীর মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না। আমি আমার সহকর্মীদের চোখে ভয়ের ছায়া দেখতে পাই।’ এ ধরনের অনুভূতি অনেক সেনার ক্ষেত্রেই প্রতিফলিত হচ্ছে।
পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা সেনাদের মধ্যে ১৪ শতাংশ গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে ২৩ জন মাথায় আঘাত পেয়েছেন, ৬০ জনের অঙ্গহানি হয়েছে এবং ১২ সেনা দৃষ্টি হারিয়েছেন। এ ছাড়া, প্রায় ১,৫০০ সেনা দুবার পুনর্বাসন কেন্দ্রে গেছেন, অর্থাৎ তারা একবার চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলেও আবার যুদ্ধের কারণে নতুন করে সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, যুদ্ধের ভয়াবহতা মানুষের মানসিক অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। তারা জানাচ্ছেন, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার সাধারণত যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে দেখা দেয় এবং এটি ব্যক্তি বিশেষের দৈনন্দিন জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। তাদের মতে, সেনাদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
এদিকে, গাজার স্থানীয় জনগণও একইভাবে মানসিক সমস্যায় ভুগছে। যুদ্ধের ফলে আহত ও চিকিৎসাহীন অবস্থায় থাকা লোকজনের জীবনযাপন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। মানবিক পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে, যা সামগ্রিকভাবে একটি গভীর মানবিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়।
এ বিষয়ে মনোবিদরা বলছেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা, যে যুদ্ধ কখনো শেষ হয় না; এর ক্ষত এবং শোক প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে যায়। যুদ্ধের ফলে মানুষের মধ্যে যে মানসিক সমস্যা তৈরি হয়, তা মোকাবিলা করতে আমাদের সবার উচিত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে একত্রিত হওয়া।
সূত্র : টাইমস অব ইসরায়েল
Discussion about this post