বাংলাদেশে অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রের কারণে বিভিন্ন খাতে ২০২৩ সালে ১৪শ’ ৩২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫০২ জন।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ অক্যুপেশনাল সেইফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন (ওশি) কর্তৃক কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
ওশি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপারসন ড. এসএম মোর্শেদ জানান, ২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা ৩২৯ জন ও আহত শ্রমিকের সংখ্যা ২৭৭ জন এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা ১১০৩ জন ও আহত শ্রমিকের সংখ্যা ২২৫ জন।
খাতভিত্তিক তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ ৬৩৭ শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন ও আহত হয়েছে ১২৭ জন, ২২০ জন দিনমজুর নিহত হয়েছেন ও আহত হয়েছেন ৭৬, নির্মানখাতে নিহত ১৪৯ এবং আহত ৭২ জন, কৃষিশ্রমিকের মৃত্যুর সংখ্যা ১৪৬, আহত হয়েছে ১০ জন (যাদের মধ্যে বজ্রপাতে মারা গেছেন ৭১ জন), পোশাকশিল্পে নিহত ৬৪ ও আহত ৮৯ জন, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে নিহত ৯৪ ও আহত ১৫ জন, মৎস্যখাতে নিহত ৫৩ ও আহত ২২ জন, সেবাখাতে নিহত ২৬ ও আহত ২২ জন, সিরামিকথাতে নিহত ১৭ ও আহত ৯ জন, চামড়াশিল্পে নিহত ৪ ও আহত ১৭ জন, ইটভাটা/ব্রিকফিল্ডে নিহত ১১ ও আহত ৬ জন, জাহাজভাঙা/শিপব্রেকিংয়ে নিহত ৭ ও আহত ২৯ জন, চাশ্রমিক নিহত ১ ও আহত ৬ জন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিহত ৩ ও আহত ২ জন।
ওশি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিবহন খাতে নিহত হয়েছেন সর্বোচ্চ সংখ্যক শ্রমিক। ২০২৩ সালে এ খাতে নিহত ৬৩৭ ও আহত ১২৭ জন। ২০২২ সালে এ খাতে নিহত ১০৫ ও আহতের সংখ্যা ছিল ২৯ জন।
প্রতিবেদনে কর্মস্থলে হতাহতের উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, অগ্নিকাণ্ড, ভবন বা স্থাপনা থকে পড়ে যাওয়া, বজ্রপাত, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, সহিংসতা, গৃহশ্রমিকদের ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন, দেয়াল-ভবন-ছাদ ও ভূমিধসের কথা বলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ তে উল্লিখিত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধানের যথাযথ প্রয়োগের লক্ষ্যে পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা, পোশাক খাতের মত অন্য সেক্টরগুলোতেও শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সেইফটি কমিটি গঠন করে তোলা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে নিহত শ্রমিকের পরিবারকে এককালীন ১০ লাখ টাকা এবং আহত শ্রমিককে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তার বিষয়টি শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে সংগঠনটি৷
এছাড়া আহত শ্রমিকরে পুনর্বাসনের বিষয়টি শ্রম আইনে অর্ন্তভুক্ত করা, শিল্প খাতের সব সেক্টরে এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) চালু করা, সরকারিভাবে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্যের সঠিক ডাটাবেইজ তৈরি করা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত অথবা আহত শ্রমিকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা এবং তাদের মাসিক চাঁদা সরকারের পক্ষ হতে প্রদান করা, শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত মালিকপক্ষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা এবং এটির আধুনিকায়ন করা।
এছাড়া কর্মস্থলে শ্রমিকদের উপযোগী ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করা, শিল্প মালিক ও ব্যবস্থাপকদের জন্য জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরপত্তা নীতিমালা-২০১৩ সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইউনিট চালু করা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়৷
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাকি রিজওয়ানা, কো-ম্যানেজমেন্ট অফিসার নুসরাত জাহানসহ অনেকে৷
জেআই/
Discussion about this post