‘জাহিদুলের বয়স যখন পাঁচ বছর তখন ওর বাবা মারা যান। দুই ছেলেকে আমি অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছি। ছয় বছর আগে আমার ছেলে সৌদি আরব যায়। দেশে এসেই বিয়ে করার কথা ছিল।
তার পছন্দের পাত্রীও দেখে রাখা হয়েছে। ধুমধাম করে ছেলে আমার বিয়ে করবে। বাড়ি-ঘরও ঠিকমতো গুছিয়েছি। আমার বাবার পছন্দের খাবার রান্না করে রেখেছি।
আমার কলিজার টুকরা জাহিদ কই গেল! তোমরা আবার বাবারে আইনা দাও।’ এসব কথা বলতে বলতেই মূর্ছা যান জাহিদুলের মা বেগম আক্তার। ছেলেকে হারিয়ে দিশাহারা মা।
গত ২৪ জুলাই সৌদি আরব থেকে সৌদি এয়ারলাইনসে সকাল ৭টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন জাহিদুল (২৫)।
এর পর থেকেই ওই প্রবাসী যুবক নিখোঁজ।
জাহিদুলের মা জানান, জাহিদুল বলেছিলেন, ‘আমি বিমান থেকে নেমেছি। ১০ মিনিট সময় লাগবে, তোমরা দুই নম্বর গেটে অপেক্ষা করো।’ সেই থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ। নিখোঁজ জাহিদুল ইসলামের বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের করোটিয়াপাড়া গ্রামে।
তার বাবা মৃত জালাল মিয়া।
জানা যায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে বিমানবন্দরের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। এ জন্য তার চাচা এনামুল হক তাকে বাড়িতে আনতে গাড়ি নিয়ে ভোরে বিমানবন্দরে যান। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর বিমানবন্দরের একটি সূত্রের মাধ্যমে জানতে পারেন, বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ইমিগ্রেশন থেকে বের হয়ে লাগেজ রেখে শুধু একটি ব্যাগ হাতে নিয়ে এক নম্বর গেট দিয়ে বের হয়েছেন তিনি। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ। চার দিনেও জাহিদুলের খোঁজ না মেলায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তার স্বজনরা।
জাহিদুলের চাচা এনামুল হক বলেন, এয়ারপোর্টে আসার পর তার সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে। সর্বশেষ সকাল ৮টার দিকে জাহিদুল জানিয়েছেন, আমার মাত্র ১০ মিনিট সময় লাগবে। তুমি দুই নম্বর গেটে আমার জন্য অপেক্ষা করো। পরে ভেতরে লাগেজ পাওয়া গেলেও জাহিদুলের খোঁজ আর পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের পরের দিন চাচা এনামুল হক বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় জিডি করেন।
বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আফতাব উদ্দিন বলেন, নিখোঁজ ওই ব্যক্তির মুঠোফোন নম্বর থাকলে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে তার সন্ধান করতে সহজ হতো। আমরা সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে এসে কোন গাড়িতে সে উঠেছে তা বের করার চেষ্টা করছি।
Discussion about this post