প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতা মানে ভোগ বিলাস নয়। ক্ষমতা হলো মানুষের সেবা করা। মানুষের জন্য কাজ করা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। কোনো ঘরহীন মানুষ যখন একটি ঘর পায়। তখন মানুষের ভিতরে যে আনন্দ, তার মুখে যে হাসি, এর থেকে বড় পাওয়া তো আর কিছু না।
গতকাল রোববার সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রমের (২য় পর্যায়) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারা দেশের ৪৫৯টি উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন এসব মানুষদের ঘর দেয়ার এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জমির দলিল ও ঘরের চাবি উপকারভোগীদের হাতে তুলে দেন। দলিলে জমির মালিকানা স্বামী ও স্ত্রীর যৌথ নামে করে দেয়া হয়েছে। তাদের নামে স্থায়ী দলিলের পাশাপাশি নামজারি করে খাজনা দাখিলাও দেয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে বিনামূল্যে দুই শতক জমিসহ সেমি পাকা ঘর প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি। গত জানুয়ারিতে প্রথম পর্যায়ে ৭০ হাজার পরিবারকে ঘর প্রদানের পরে দ্বিতীয় পর্যায়ে এক সঙ্গে আরো প্রায় ৫৩ হাজার ৩৪০টি অসহায় পরিবারকে ঘর দিচ্ছে সরকার। এছাড়া আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আরো ১ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যার ঘর নাই বাড়ি নাই তাকে ফুটপাথে পড়তে হয়। রাস্তার পাশে, রেললাইনের পাশে বা বিভিন্ন জায়গায় ঝড় বৃষ্টি বাদলা সবকিছু মাথায় নিয়ে তাকে জীবনযাপন করতে হয়। সে যখন একটা ঘর পায়, তার জীবনটাই বদলে যায়। আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি যে বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত করব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আজকে আশ্রয়ণের মাধ্যমে এবং অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে গৃহহীন মানুষকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। যাতে মানুষ ঘর পাবে সেই সঙ্গে তাদেরকে কিছু ট্রেনিং দেয়া হয়, ঋণ দেয়া হয় এবং নগদ টাকা দেয়া হয়, তাকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়। যেন ভালোভাবে মানুষ বাঁচতে পারে, কিছু করে খেতে পারে। পরমুখাপেক্ষী না হতে হয়। সে যেন নিজের জীবনটাকে নিজেই গড়ে তুলতে পারে। বস্তিবাসিরাও তার নিজ গ্রামে ফিরে গেলে সেখানেও একটা ফান্ড এবং প্রকল্প আমরা নিয়েছিলাম, ঘরে ফেরা কর্মসূচি। নিজের গ্রামে গেলে সেখানে ঘরবাড়ি, ছয় মাসের জন্য ভিজিএফের মাধ্যমে বিনা পয়সায় খাদ্যের ব্যবস্থা করা, তার ঋণের ব্যবস্থা করা অর্থ্যাৎ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আমরা করে দেব।
মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে নাÑ প্রধানমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তের আলোকে আজকের আশ্রয়ণের মধ্য দিয়ে গত ছয় মাসে মোট এক লাখ ২৩ হাজার ২৪৪টি পরিবারকে ভূমি ও গৃহ প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বছর প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সরকারের সিনিয়র সচিব ও সচিবরা তাদের নিজস্ব অর্থায়নে ১৬০টি পরিবারকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা গৃহনির্মাণ করে দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গণভবন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। তিনি অনুষ্ঠানে অন্তভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল শীর্ষক একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী ৪টি উপজেলার উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন। একসঙ্গে এত মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি-ঘর দেয়ার ঘটনা পৃথিবীতে নজিরবিহীন।
ড.আহমদ কায়কাউস বলেন, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আরো ১ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। এর আগে বিনামূল্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘর প্রদান উপলক্ষে ১৭ জুন পিএমওতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে মুখ্য সচিব জানান, যদি দুই ডেসিমেল জায়গার মূল্য গড়ে ৫০ হাজার টাকাও ধরি তাহলে এক একটি পরিবার প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার সম্পদ পাচ্ছে। প্রতিটি বাড়ির নির্মাণ খরচ প্রায় ২ লাখ টাকা এবং ইউটিলিটি সংযোগ বাবদ আরো প্রায় ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে এই আশ্রয়ণ প্রকল্প শুরু করেন এবং পিএমও পরিচালিত এই প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৫৬২টি ভূমহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর প্রদান করা হয়েছে। এদিনের অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৪৩৬টি ঘর রংপুর বিভাগে প্রদান করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রামে ১০ হাজার ৫৪৭টি ঘর, রাজধানী ঢাকায় ৭ হাজার ৬৩০টি ঘর, রাজশাহীতে ৭ হাজার ১৭২টি, ৩৭ হাজার ১৫৩টি বরিশালে, ৯১১টি খুলনায়, ২ হাজার ৫১২টি ময়মনসিংহে এবং ১ হাজার ৯৭৯টি ঘর সিলেট বিভাগে প্রদান করা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের তালিকানুযায়ী দেশে ভূমিহীন এবং গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১টি (ক-শ্রেণি)। আর শুধুমাত্র গৃহহীণ পরিবার হচ্ছে ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১টি (খ-শ্রেণি)।
আহমদ কায়কাউস বলেন, একসঙ্গে এত মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি-ঘর দেয়ার ঘটনা পৃথিবীতে নজিরবিহীন। বিভিন্ন দেশে ভূমিহীন, গৃহহীনদের ঘর-বাড়ি নির্মাণের জন্য সুদবিহীন ঋণ দেয়ার নজির থাকলেও ভূমিহীন-গৃহহীনদের ডেকে তাদের বাড়ি-ঘর দেয়ার নজির আর নেই।
Discussion about this post