ইতালিতে আবার ট্র্যাজেডি। একাই ১৫টি গাড়ি পুড়িয়ে এক বাংলাদেশি গ্রেফতার হবার পর এবার আরেক বাংলাদেশি নিজ হাতে ছুরি চালিয়ে খুন করেছে ৪ বছরের কন্যা সন্তানকে। মধ্য ইতালির তোস্কানা বিভাগের আরেৎসো প্রভিন্সের বুচিনে পৌর এলাকায় ৩৯ বছর বয়সী ঐ বাংলাদেশি ২১ এপ্রিল মঙ্গলবার নিজ বাসায় ঘটায় নৃশংস হত্যাকান্ড। শিশুসন্তানকে খুন করেই ক্ষান্ত হয়নি এই নরপিশাচ। হত্যার উদ্দেশ্যে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে ১২ বছরের পুত্র সন্তানকে। আহত অবস্থায় পাশের বাসায় লুকিয়ে অল্পের জন্য রক্ষা পায় কিশোর। খুনী বাবা এক পর্যায়ে আত্মহত্যার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়।
বুচিনে মিউনিসিপ্যালিটির লেভানে এলাকার তলিয়াত্তি রোডের একটি ভবনের চারতলায় মর্মান্তিক ঘটনার সময় জরুরি কেনাকাটার জন্য বাচ্চাদের মা বাসার বাইরে ছিলো। এই সুযোগেই খুনি প্রথমে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে ৪ বছরের ছোট সন্তানকে। বাবার আক্রমনে আহত ১২ বছরের কিশোর দৌড়ে পাশের এপার্টমেন্টে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পাশের ঐ এপার্টমেন্টেও বাংলাদেশিদের বসবাস। খুনি বাবা পেছন পেছন গিয়ে বাইরে থেকে দরজা খুলতে পারেনি যদিও দরজা ঠিকভাবে বন্ধ ছিলো না। সৌভাগ্যবশত জানে বাঁচে কিশোর।
বাসার ভেতরে বিকট চিৎকার আশপাশের বাসিন্দারা টের পাওয়া মাত্রই প্যারামিলিটারি পুলিশ ফোর্স ক্যারাবিনিয়েরি কল করা হয়। খুনি দ্রুত নিচে নেমে বাড়ির পাশেই একটি পানির কূপে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলও দ্রুত ঘটনাস্থলে চলে এসে তাকে জীবিত উদ্ধার করে মন্তেভার্কি হাসপাতালে পাঠায়। আহত কিশোরকেও নিয়ে যাওয়া হয় একই হাসপাতালে। বাংলাদেশি এই খুনি স্থানীয় আরেক বাংলাদেশির একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতো। লকডাউনের কারণে সে অন্য সবার মতোই নিজ বাসায় অবস্থান করছিলো।
প্রতিবেশী বাংলাদেশিরা জানান, স্বদেশি এই খুনি গত বেশ ক’দিন ধরেই স্বাভাবিক ছিলো না। এপার্টমেন্টের ভেতরে রাগান্বিত আচরণ বাইরে থেকেই বুঝতে পারেন তাঁরা। শিশুদের মা অতি সম্প্রতি বাসায় ডাক্তারও ডাকেন স্বামীর নার্ভাসনেসের কারণে। শান্ত থাকার জন্য চিকিৎসক সম্ভবত কিছু ঔষধ লিখে দেন তখন। খুনীর সম্ভাব্য অর্থনৈতিক দুরবস্থার বিষয়ও অনুমান করছেন প্রতিবেশীরা। ধারালো ছুরি খুঁজে পায়নি এখনো ক্যারাবিনিয়েরি। যে পানির কূপে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় খুনী, সেখানেই তা ফেলে দেয়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুনের মূল রহস্য উদঘাটনে জোরেশোরে কাজ করছে অভিজ্ঞ তদন্ত টিম।
◾ মাঈনুল ইসলাম নাসিম ◾
(ইতালি প্রবাসী ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক)
Discussion about this post