কামরুল হাসান দর্পণ : দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রটি ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। বেকার থেকে যাচ্ছে লাখ লাখ কর্মোপোযোগী মানুষ। সরকারি হিসেবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখের মতো হলেও এ সংখ্যাটি নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, দেশে বেকারের সংখ্যা কয়েক কোটি।
যে হারে কর্মসংস্থান হওয়ার কথা, সে হারে না হওয়ায় এ সংখ্যা ক্রমবর্ধমানহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বছরে ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে কাজ পায় মাত্র ৭ লাখ। এর মধ্যে শিক্ষিত-অশিক্ষিত বেকার রয়েছে।
পত্রপত্রিকার হিসাব অনুযায়ী, দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকার প্রায় পৌনে এক কোটি। প্রতি বছর এর সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন বেকার। তথ্য অনুযায়ী, কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় মাধ্যম বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান শতকরা ৯৫ ভাগ বেকারের কর্মসংস্থান করে। এর মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান করছে পোশাকশিল্প। এ খাতে প্রায় ৪০ লাখ লোক কাজ করছে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থার অবদান মাত্র ৫ শতাংশ। অবশ্য দেশি এসব পরিসংখ্যানের সাথে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার হিসাবের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়।
বছর পাঁচেক আগে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ৩ কোটি। কয়েক বছরের মধ্যে তা দ্বিগুণ হবে। যা মোট জনসংখ্যার ৩৯.৪০ শতাংশ হবে। হিসাবটি কয়েক বছর আগের হলেও এর যে খুব পরিবর্তন হয়েছে, তা বলা যায় না। বরং বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর সাথে নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা শত শত শ্রমিক। শুধু এসব দেশ থেকেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেও মানুষ দেশে ফিরছে। ফলে দেশের বেকারত্বের হারের সাথে তারাও যুক্ত হচ্ছে। লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে বিদেশ যাওয়া হতাশ এসব মানুষ দেশে ফিরে কী করবে, কোথায় কর্মসংস্থান হবে, তার নিশ্চয়তা নেই।
এই যখন পরিস্থিতি তখন পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, দেশে বিদেশি কর্মী কাজ করছে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ। এর মধ্যে শুধু ভারতেরই রয়েছে প্রায় ৫ লাখ। এছাড়া চীন, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বের কর্মীও রয়েছে। এরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে কর্মরত। বিশেষ করে গার্মেন্ট শিল্প-কারখানায় বিভিন্ন উচ্চপদে এরা কাজ করছে। সিপিডির এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, এ খাতের ১৩ শতাংশ বা ৪০০ কারখানায় বিদেশি কর্মীরা কাজ করছে। আর এ খাতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশিরা দেশ থেকে বছরে নিয়ে যাচ্ছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
এসব তথ্য-উপাত্ত এখানে তুলে ধরার কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশে যেখানে কোটি কোটি বেকার নিদারুণ দুঃখ-কষ্ট ও হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, সেখানে অবলীলায় বিদেশিরা এ দেশ থেকে বিপুল অংকের অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। চাকরির বাজারে ক্রমশঃ তাদের আধিপত্য। অথচ দেশে শিক্ষিত-অশিক্ষিত কোটি কোটি বেকারের কর্মসংস্থান হচ্ছে না। দেশে বিদেশিদের এই বিপুল কর্মসংস্থানের চিত্র দেখে বিস্মিত এবং দুঃখিত না হয়ে পারা যায় না।
Discussion about this post