মোহাম্মদ এনামুল হক: জন্মিলে মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন, প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে; তারপর তোমরা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে ( সুরা আনকাবুত, আয়াত-৫৭)।
মৃত্যু অমোঘ সত্য। তবে কারো কারো মৃত্যু মানুষের হৃদয় মাঝে রেখে যায় বেদনার রেখাপাত আর বিষাদের কালোছায়া। অতি সম্প্রতি দু’জন প্রবাসীর মৃত্যু দেশবিদেশে অনেকের হৃদয়কে প্রবলভাবে নাড়া দিয়ে গেছে। এ দু’জন প্রবাসীর একই নাম রুহুল আমিন। তাদের একজন ছিলেন সৌদি প্রবাসী আর অপর জন ছিলেন আমেরিকা প্রবাসী।
সৌদি প্রবাসী রুহুল আমিনঃ সৌদি প্রবাসী রুহুল আমিনের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলায়। জানা যায়, রুহুল আমিন অন্যের কাছ থেকে ধার করে টাকা নিয়ে ২০১৭ সালে সোনার হরিণ ধরতে সৌদি আরবে যান এবং ২ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও পরিবার ও ঋণের কথা চিন্তা করে দেশে আসা থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! গত ১৬ ডিসেম্বর মস্তিকে রক্তক্ষরণ হয়ে সৌদি আরবের একটি হাসপাতালে মারা যান। (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নইলাহি রাজিউন) রুহুল আমিনের মৃত্যুতে তার পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া ও চরম হতাশা।
এদিকে রুহুল আমিনের মৃত্যুতে তার শোকাহত পরিবার যখন তার লাশের জন্য বেদনায় কাতর হয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনতেছিলেন তখনই শোনা গেলো আরো একটি হৃদয়বিদারক খবর। সৌদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুলে এক পাকিস্তানি লাশের সাথে রুহুল আমিনের লাশ বদল হয়ে পাকিস্তানে চলে যায় এবং পাকিস্তানেই রুহুল আমিনের লাশ দাফন করা হয়। রুহুল আমিনের পরিবার তার লাশ না দেখতে পেয়ে মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েন। এ ঘটনায় দেশবিদেশে অনেকেই মর্মাহত ও ব্যথিত হয়েছেন। আমেরিকা প্রবাসী রুহুল আমিনঃ আরেক জন রুহুল আমিন থাকতেন আমেরিকায়। তার গ্রামের বাড়ি সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলায়। রুহুল আমিন আমেরিকার গ্রীণকার্ড পাওয়ার আশায় আশায় দীর্ঘ ২৪ বছর পার করে দিয়েছিলেন। ২৪ বছর শেষে দীর্ঘ প্রত্যাশিত গ্রীনকার্ড হাতে পান।
গ্রীনকার্ড পাবার পর রুহুল আমিন দেশে আসার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। অনেক আশা তার মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ২৪ বছর পর দেখা হবে। সে মোতাবেক রুহুল আমিন গত ১৪ জানুয়ারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির লং আইল্যান্ড বরোর কুইন্স কাউন্টিতে অবস্থিত জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন এবং ১৫ জানুয়ারী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখানে তার মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজন তাকে স্বাগত জানান।
স্বজনরা তাকে নেয়ার জন্য মাইক্রোবাস নিয়ে আসেন । বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রুহুল আমিনকে নিয়ে স্বজনরা সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়না দেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! রুহুল আমিনকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকার কাছাকাছি এলে একটি ট্রাক তাদের মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলে রুহুল আমিন মৃত্যুবরণ করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নইলাহি রাজিউন) তার এ মর্মান্তিক মৃত্যুতে দেশবিদেশে অনেকেই হৃদয়ে আঘাত পেয়েছেন।
পরপর দু’জন প্রবাসী রহুল আমিনের মৃত্যুতে তাদের আত্মীয়-স্বজন হারিয়েছে তাদের প্রিয় ব্যক্তিকে। দেশ হারিয়েছে দু’জন রেমিটেন্সে যোদ্ধাকে। তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। তাদের শোকাহত পরিবারের জন্য রইলো গভীর সমবেদনা। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তায়লা বলেন, কেউ জানেনা আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানেনা কোন স্থানে তার মৃত্যু ঘটবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ব বিষয়ে অবহিত। (সুরাঃ লোকমান আয়াত-৩৪)
Discussion about this post