দেশে শিশু, নারী ও প্রতিবন্ধীরা ক্রমাগত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে জানিয়ে জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করে ধর্ষকদের ক্রসফায়ারে দেয়ার দাবি উঠেছে।
এ বিষয়ে সরকারি ও বিরোধীদলীয় এমপিরা এক জোট হয়ে বলেছেন, এই পৃথিবীতে তাদের (ধর্ষক) থাকার কোনো অধিকার নেই। আবার কেউ কেউ দাবি করেছেন, তাদের ক্রসফায়ারে দিলে কোনো পাপ হবে না বরং বেহেশতে যাওয়া যাবে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তারা।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদের বৈঠকে এ বিষয়ে প্রথমেই আলোচনার সূত্রপাত করেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন কাজী ফিরোজ রশীদ, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রমুখ।
অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হলো। ধর্ষণের পর যদিও সরকারের পক্ষ থেকে জরুরিভাবে সেই ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও গ্রেফতার করার পরও জনমনে অনেক প্রশ্ন উঠেছে এটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের পর পরই সাভারে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ধামরাইতে একই ঘটনা ঘটে। পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৯ সাল ধর্ষণের মহাৎসব ঘটেছে। কেন ধর্ষণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে? এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
এ বিষয়ে সংসদে দুই ঘন্টার জন্য সাধারণ আলোচনার সুযোগ দিতে স্পীকারের কাছে দাবী জানিয়ে বলেন, আমাদের দলের প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ যখন ক্ষমতায় ছিলেন, ওই সময় এসিড নিক্ষেপ করে হত্যাকান্ড বেড়ে যায়। তখন এরশাদ সাহেব এটা প্রতিরোধে এসিড মারার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান করেছিলেন। এখন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড। কিন্তু যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়ে এটা কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না। তাই সময় এসেছে চিন্তা করার, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড করা হোক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, এতো ঘটনা ঘটছে, মাদকের জন্য এতো ক্রসফায়ার হচ্ছে। সমানে বন্দুক যুদ্ধে মারা যায়। কিন্তু এই ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ, এখন পর্যন্ত কেন একজন ধর্ষক বন্দুক যুদ্ধে মারা যায় না? বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে যদি ব্যবস্থা না নেয়া যায়, তবে কোনক্রমেই এটা কন্ট্রোল করা যাবে না।
একই দাবী জানিয়ে জাতীয় পার্টির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, টাঙ্গাইলে বাসে ধর্ষণের পর পর পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করলো। সেদিন যদি পুলিশ ওই পাঁচ ধর্ষককে মধুপুরে নিয়ে গুলি করে মারত, তাহলে কিন্তু অন্য কেউ আবার ধর্ষিত হত না।
তিনি বলেন, একটার পর একটা ধর্ষণ হচ্ছে। মেয়েরা বাসে ওঠে, ওই বাসে আগে থেকেই ৪-৫জন থাকে। নারীরা ওঠার পর দেখা যায় ওরা যাত্রী না, ওরা ধর্ষক। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের পর একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হোক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য, সেখানে গুলি করে মারা হোক।
তিনি আরো বলেন, ধর্ষকদের একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত এনকাউন্টার। যাতে আর কোন ধর্ষক যেন সাহস না পায়। ধর্ষক গ্রেফতার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী নিয়ে ওইখানে গুলি করে মেরে ফেলা হোক।
কাজী ফিরোজ রশীদ ও মুজিবুল হক চুন্নুর এমন দাবীর সঙ্গে একমত পোষণ করে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে অনেককে এভাবে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। ভারতে একবার বাসে এক নারীকে গণধর্ষণ করা হয়। পরে সেখানে পাঁচ ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর ওই পাঁচ ধর্ষককে ক্রয়ফায়ারে দেওয়া হয়েছে। তারপর ভারতে ধর্ষণের ঘটনা কমে গেছে। কাজেই আমি অন্য দুই সংসদ সদস্য’র সঙ্গে একমত। আমি যদি চিনি যে সে ধর্ষক, সেই এই জঘন্য কাজ করেছে- তার আর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ফ্লোর নিয়ে বলেন, আল্লাহকে হাজির-নাজির করে বলছি, এসব ধর্ষকদের ক্রসফায়ার করলে কোন পাপ হবে না, বরং বেহেস্তে যাওয়া যাবে। কোন অসুবিধা নেই।
Discussion about this post