চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বিশ্বমানের হেল্থ সিটি করার পরিকল্পনা নিচ্ছেন সরকার। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।
আমিরাত সরকারের চ্যারিটেবল প্রতিষ্টান শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ান ফাউন্ডেশন রাঙ্গুনিয়াস্থ ১১০ একর পরিত্যক্ত ভুমিতে এক ছাদের নিচে সব ধরণের সুবিধা সম্বলিত বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্টান গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছেন । সেখানে বিশেষায়িত হাসপাতাল ছাড়াও থাকবে মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউটসহ ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্টান।
শুক্রবার (২২ মার্চ) সকাল রাঙ্গুনিয়ায় প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত এইচ ই সাইয়েদ মুহাম্মদ আল মাহিরী। পরিদর্শনকালে আরব আমিরাতের বিভিন্ন সংস্থার আরো চারজন সদস্য এবং বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল তারঁ সাথে ছিলেন। এসময় তিনি প্রকল্প এলাকাটির সীমানা প্রাচীরসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখে পরিত্যক্ত জমিটিকে কাজে লাগিয়ে মানবসেবার কাজে ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেন।
এসময় প্রকল্প এলাকা সংলগ্ন কর্ণফুলি নদীর তীরের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখে তিনি বিমোহিত হন। শুক্রবার (২২ মার্চ) রাতে ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথেও বৈঠকে মিলিত হবেন রাষ্ট্রদুতসহ আরব আমিরাতের পরিদর্শন টিম। বৈঠকটিতে প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদেরও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. সাইফুল্লাহিল আজম।
রাঙ্গুনিয়ায় সরেজমিন পরিদর্শনকালে রাষ্ট্রদুতের সাথে আরব আমিরাত রেড ক্রিসেন্টের সেক্রেটারি, আমিরাত রেড ক্রিসেন্টের দূর্যোগ বিভাগের প্রধান সাইয়্যেদ মোহাম্মেদ আল খামিরী, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. সাইফুল্লাহিল আজম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) আমিনুল হাসান, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারি সচিব জসিম উদ্দিন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান, সহকারি কমিশনার (ভুমি) পূর্বিতা চাকমা, উপজেলা প্রকৌশলী দিদারুল আলম, মৎস্য কর্মকর্তা স্বপন চন্দ্র দে।
এসময় রাষ্ট্রদুতসহ পরিদর্শন দলের সদস্যরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুর কুতুবুল আলম, পোমরা আ.লীগের সভাপতি ছৈয়দুল আলম, সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা প্রবাসী শফিউল আলমসহ স্থানীয় প্রশাসন, সাংবাদিক জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে কথা বলেন। সারাদিন তারা প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন খুটিনাটি ঘুরে দেখেন।
সংশ্লিস্ট সুত্র জানায়, প্রস্তাবিত হেলথ সিটিতে প্রাথমিক ভাবে ৬৪ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল দিয়ে শুরু করা হলেও ক্রমান্বয়ে তা ১২০ শয্যায় উন্নিত করা হবে বলে প্রকল্পটির ডিটেইল প্ল্যানে প্রস্তাব করা হয়েছে। আধুনিক মেটারনিটি সেবা নিশ্চিত করতে একটি অপারেশন থিয়েটারকে সার্বক্ষণিক দুজন সার্জনসহ প্রস্তুত রাখা হবে। অপর অপারেশন থিয়েটার ব্যবহার হবে জেনারেল সার্জারিতে। মা ও শিশুদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের উন্নত হাসপাতাল গুলোর ন্যায় সব ধরণের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে প্রস্তাবিত রাঙ্গুনিয়া শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান হাসপাতাল। এটিকে বাংলাদেশের অন্যতম বিশেষায়িত জেনারেল হাসপাতালে পরিণত করা হবে। পুরো ১১০ এলাকা জুড়ে গড়ে উঠবে বিশ্বমানের হেলথ সিটি।
রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচিত সাংসদ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরব আমিরাত সফরকালে সে দেশের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনায় রাঙ্গুনিয়ায় তাদের পরিত্যক্ত ভুমিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি নজরে আনলে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসেন রাষ্ট্রদুতের নেতৃত্বে পরিদর্শন দল। ২০২০ সাল নাগাদ হাসপাতালটির নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছেন শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ান ফাউন্ডেশন।
রাঙ্গুনিয়ায় তাদের পরিত্যক্ত জমিতে বিশ্বমানের হাসপাতাল ছাড়াও নার্সিং ইনস্টিটিউট ও মেডিকেল কলেজ, মান সম্পন্ন ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্টানসহ বিভিন্ন সেবা মুলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট, ডেন্টাল কলেজ, মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্টান গড়ে তোলার নিমিত্তে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবী ফান্ড ফর ডেভেলপ্মেন্টের ম্যানেজার আলী হুমাইদ আলদিরী, একই প্রতিষ্টানের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ মুবারক আল মেহরিবী রাঙ্গুনিয়াস্থ নাহিয়ান ফাউন্ডেশনের প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান জানান, ১৯৮৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমন্ত্রণে চট্টগ্রামে আসেন তখনকার আরব আমিরাতের বাদশা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান। এসময় তিনি হেলিকপ্টারে চড়ে চট্টগ্রামের প্রকৃতি ও রাঙ্গুনিয়ায় স্থাপিত রওশন পল্লী দেখার সময়ে এরশাদের কাছে রাঙ্গুনিয়ায় কর্ণফুলি নদির তীরে প্রাকৃতিক পরিবেশে সুবিশাল জায়গাটি দেখে সেখানে একটি প্রাসাদ ও অবকাশ যাপন কেন্দ্র নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
আমিরাতের বাদশার পছন্দ ও ইচ্ছে অনুযায়ি এরশাদ সরকার মাত্র ১০১ টাকা প্রতিকী মুল্যে তাকে রাঙ্গুনিয়ার পোমরা এলাকায় ১১০ একর ওই জমিটি হস্তান্তর করেন। এরপর জায়গাটিতে সুবিশাল তিনটি তোরণসহ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করলেও প্রাসাদসহ অবকাশ যাপন কেন্দ্র নির্মাণ করা যায়নি। কিছুদিন পর বাদশা শেখ জায়েদের মৃত্যু হলে প্রকল্পটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। দীর্ঘদিন পর রাঙ্গুনিয়া থেকে পরপর তিনবার নির্বাচিত এমপি বর্তমান তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ২০১৩ সালে শেখ নাহিয়ান পরিবারের সাথে ব্যাক্তিগতভাবে যোগাযোগের মাধ্যমে জমিটিতে বিশ্বমানের হাসপাতালসহ মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট নির্মাণের ব্যাাপারে রাজি করান।
তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এমরুল করিম রাশেদ জানান, ১৯৯১ সাল থেকে অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা আরব আমিরাতের প্রয়াত বাদশা আল নাহিয়ানের প্রকল্পে বিশ্বমানের হাসপাতাল নির্মাণসহ বিভিন্ন সেবামুলক কার্যক্রম চালাতে নাহিয়ান পরিবারের সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেন বর্তমান তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। একই ধারাবাহিকতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিভিন্ন ধাপ এগুচ্ছে। এবার প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে মন্ত্রী তৎপর রয়েছেন বলে তিনি জানান।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দীকি বলেন, পরিত্যক্ত ১১০ একর জমিতে আরব আমিরাতের সাহার্য্যে একটি হেলথ সিটি গড়ে তোলার প্রচেষ্ঠা চালোচ্ছেন সরকার। সেখানে যদি বিশ্বমানের বিশেষায়িত হাসপাতালসহ মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলা যায় তাহলে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যসেবায় মাইলফলক রচিত হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির বাস্তবায়নে গুরুত্ব সহকারে দেখছে বলে তিনি জানান।
Discussion about this post